ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সকলের জন্য খেলাধুলা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তিনি ফুটবল খেলোয়াড়দের এমনভাবে নিজেদের প্রস্তুত করার আহবান জানিয়েছেন, যাতে তারা ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ খেলতে পারে।
‘কয়েক দিন আগে বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে। তবে, বাংলাদেশ কোয়াালিফাই করতে পারে নি। আমি আশা করি, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলবে ও তোমাদের (ফুটবলারদের) নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।’
শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বালক অনূর্ধ্ব-১৭-২০২২ ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বালিকা অনূর্ধ্ব-১৭-২০২২ এর রানার্সআপ ও চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে ট্রফি ও পুরস্কার বিতরণকালে বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকায় বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ফুটবল টুর্নামেন্টে উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের এক লাখ দশ হাজার ৫৫২ জন ছেলে ও মেয়ের অংশ নেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি একটি বিস্ময়কর ঘটনা। আমি মনে করি, পৃথিবীতে এমন আর কোন দেশ নেই, যেখানে এত বিপুল সংখ্যক ফুটবলার এ ধরনের টুর্নামেন্টে অংশ নেয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর প্রথম বারের মত ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার সরকার খেলাধুলায় মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দায়ি়ত্ব গ্রহণের পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল আমাদের সন্তানদের ফুটবল, ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলাধুলাকে আরো উৎসাহিত করা। আমাদের শিশুরা যত বেশি খেলাধুলায় নিজেকে নিয়োজিত করবে, আমরা তত বেশি সুবিধা পাব।’
খেলাধুলার সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য খেলাধুলা নিশ্চিত করা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ৪০ জন ছেলে ও ৪০ জন মেয়েকে তাদের প্রতিভা বিকাশের লক্ষে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) তিন মাস প্রশিক্ষণ দেয়া হবে ও তাদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হবে।’
তিনি বলেন, তার সরকারের প্রথম মেয়াদে ক্রিকেটে বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা অর্জন করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ফুটবলের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করছে ও একই সাথে নারীদেও খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করছে।
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের মেধাবীদের বের করে আনার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত তারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে।’
তিনি বলেন, তারা এমনকি বিশেষভাবে চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করেছে ও তারা অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে এনেছে।
দেশের প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম ও প্রতিটি জেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণের পাশাপাশি একাডেমি নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে ৫৬টি জেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রতিটি বিভাগে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা করবেন, যার লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিটি খেলার ক্রীড়াবিদদের যথাযথ প্রশিক্ষণের সুবিধা দেয়া। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের বিশ্বমানের ক্রীড়া মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া তৃণমূলে খেলাধুলা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সারা দেশে সুইমিং পুল, শুটিং রেঞ্জ, কাবাডি ও ভলিবল স্টেডিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণ করছেন বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এমন ব্যবস্থা করছি, যাতে প্রতিটি জায়গায় সবাই খেলাধুলায় অংশ নিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের পর তারা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও গড়ে তুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী রংপুর বিভাগ ও খুলনা বিভাগের মধ্যকার নারীদের ফাইনাল ফুটবল ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা প্রত্যক্ষ করেন।
শেখ মুজিবুর রহমান ন্যাশনাল গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুর্ধ-১৭ বালক ফাইনাল ম্যাচে প্যানাল্টি শর্টে গোল করে বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে খেলায় সমতা ফিরিয়ে এনে ১-১ গোলে ড্র করে সিলেট বিভাগ। বালক পর্যায়ে সিলেট বিভাগের মো. সাইফুর রহমান ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ও একই বিভাগের মো. রাজু মিয়া ফাইনাল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। বরিশাল বিভাগের শাহাদৎ গাজী সেরা গোলদাতা ও একই বিভাগের মো. রিয়াজ সেরা গোল কিপার হয়েছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ন্যাশনাল গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট বালিকা অনুর্ধ-১৭তে ২-১ গোলে খুলনা বিভাগকে পরাজিত করে রংপুর বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গার্লস ফুটবল টুর্ণামেন্টে রংপুর বিভাগের কাকলি ওমেন অব দ্য টুর্নামেন্ট ও ফাইনাল ম্যাচে একই বিভাগের শান্তি মর্জি সেরা খেলোয়ার, নাসরিন সেরা গোলদাতা ও শাম্মি আক্তার সেরা গোলকিপার নির্বচিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন এতে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য দেন।