ডেস্ক রিপোর্ট: দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধবিমানকে ভয় দেখিয়েছে চীনের একটি যুদ্ধবিমান। চীনা বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানটির প্রায় দশ ফুটের মধ্যে চলে এসেছিল। তখন আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানটিই সরে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, চীনা বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানের পাখার দশ ফুট আর নাকের ২০ ফুটের মধ্যে চলে এসেছিল। সংঘাত এড়াতে তখন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানটিকেই সরে যাওয়ার কৌশল নিতে হয়।
গত ২১ ডিসেম্বর বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর এ ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানটি সাগরের ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বিবৃতিতে এ খবর দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর আরসি-১৩৫ নজরদারি বিমানের গতিরোধ করে গত ২১ ডিসেম্বর চীনের একটি জে-১১ যুদ্ধবিমানের পাইলট ঝুঁকিপূর্ণ মহড়া দিয়েছেন।’
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তাদের নজরদারি বিমানটি আন্তর্জাতিক আকাশ সীমায় ‘আইন মেনে’ দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর উড়ছিল।
চীনা সামরিক বিমানের ক্রমবর্ধমান বিপজ্জনক আচরণের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ জানানোর পর চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ আকাশে দুই পক্ষের বিমানের মুখোমুখি হওয়ার এ খবর এল। গত কয়েক মাসে চীনের যুদ্ধবিমানের পাইলটদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ ওঠেছে, তারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশেগুলোর বিমানের কাছে গিয়েছে। বিশেষ করে স্পর্শকাতর স্থান ও অঞ্চলগুলোতে অন্য দেশের পাইলটদের হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে চীনা পাইলটদের বিরুদ্ধে।
চলতি বছরের জুনে কানাডা জানায়, খুবই ঝুঁকিপূর্ণভাবে কানাডার একটি বিমানের কাছে চলে এসেছিল চীনের বিমান। কানাডার বিমানটি উত্তর কোরিয়ার জাতিসংঘের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সীমান্তে টহল দিচ্ছিল। ওই সময় এ ঘটনাকে ‘খুবই হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এছাড়া অস্ট্রেলিয়াও চীনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছিল। চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে দুই বার চীনের বিমানের সাথে অস্ট্রেলিয়ার যুদ্ধবিমানের ঝামেলা বাধে।
যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্রে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি অন্যান্য দেশের জাহাজের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ানো বাড়িয়েছে। ঠিক এমন সময়েই আকাশপথেও একই ধরনের কাজ করছে তারা। যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় চিন্তার কারণ।
চীন দাবি করে থাকে, দক্ষিণ চীন সাগরের পুরো অংশ তাদের। যদিও ২০১৬ সালে একটি আন্তর্জাতিক আদালত রায় দেয়, চীনের এ দাবির কোন ভিত্তি নেই। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রও চীনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে থাকে। কিন্তু তা সত্বেও বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ ও সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েই চলছে চীন।
ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই ও তাইওয়ান দাবি করে থাকে, দক্ষিণ চীন সাগরে তাদেরও অংশ আছে। তবে তা মানে না চীন।
চীনের দাবিকৃত জলসীমার মধ্যে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সের দাবি করা ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ও ঢুকে পড়েছে। এ জলসীমা দিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়, সাগরের এ অঞ্চলটি মাছ ও গ্যাসের ভাণ্ডার হিসেবেও পরিচিত।