আবছার উদ্দিন অলি: আমরা আরো একটি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছি। দেখতে দেখতে আরেকটি বছর আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিল। ভালমন্দ মিলিয়ে কেটেছে ২০২২ সাল। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির যোগফল বলতে পারাও এখন অনেক কঠিন। দিন শেষে আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়েই আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ছুটে চলেছি ঘর সংসার আর পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধের সংগ্রামে। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাভাব, মূল্যস্ফীতি, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে মানুষের জীবন-যাপন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের বিরাট সামঞ্জস্য। সেই সাথে মধ্যবিত্তের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৩ সাল কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
চীনে নতুন করে করোনার নতুন ভাইরাস দেখা দিয়েছে। এটিও আমাদের জন্য একটি বিপদ সংকেত। আমাদেরকে সব সমস্যাকে মোকাবিলা করে এ সময় কাটিয়ে নতুন আশা নতুন স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছর ২০২৩ সাল। করোনার কারণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে নিজে নিরাপদ থেকে অপরকে নিরাপদ রাখার প্রত্যয় নিয়ে নতুন বছরের কার্যক্রম চলবে এমনটি প্রত্যাশা রাখি। কেননা, বাংলাদেশের আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শীতকাল হওয়াতে করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সেই সাথে ওমিক্রনের একটি আভাস তো রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও ডেঙ্গু আক্রান্ত আসংখ্যাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাভাব আর সেটাকে মাথায় রেখে আমাদের জীবন জীবিকা সচল রাখতে আমরা সরকারের দেয়া সব নিয়ম-নীতি মেনে নতুন বছরে নতুন করে এগিয়ে যাব সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে।
গত বছরে আমরা আমাদের অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছি; যা আমাদের হৃদয়ে অনন্তকাল ধরে স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে। যারা আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছেন তাদের জন্য রইল শ্রদ্ধা আর ভালবাসা। নতুন সাজে সাজবে চট্টগ্রাম। ইতিমধ্যে নব বর্ষ উদযাপন ও বর্ষ বিদায়ের নানা উৎসবের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। মানব সভ্যতার আলোকেই এক দিন মানুষ এক সেকেন্ডকে সময়ের একক হিসেবে ধরে নিয়ে তারপর মিনিট, ঘন্টা, দিন মাস বর্ষ শতাব্দী ইত্যাদির গণনা শুরু করে। সময় হল অখন্ড এক চিরন্তন গতি। সময়ের ভিতরে পৃথিবীর সব প্রাণীর জন্ম মৃত্যু ক্রমাগত ছুটে চলছে। সময় কারো পক্ষপাতিত্ব করে না। আমরা তাই উন্মুক্ত সময়ের মুক্ত মানুষ হয়ে কর্মফলকে বিশ্বাস করি।
কথায় আছে যৎ কর্ম তৎ ফল। সুতরাং এ ইংরেজী নব বর্ষটি কি রকম হওয়া উচিত- এ বিষয়ে নিছক কথার ফুলঝুরি না ছড়িয়ে আমার সব কর্মে বলনে চলনে দায়িত্ব পালনে আগামী দিনগুলোর প্রতিটি মুহুর্তকে সততার সাথে সৃজনশীল করে তুলতে চাই। উন্নয়নের বাংলাদেশ এ শ্লোগানের মর্মবানী এ প্রজন্মের মনে প্রাণে ও মননে মিশিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরো শাণিত করার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। পুরো ২০২০ ও ২০২২ সাল বৈশ্বিক করোনা মহামারীর ছোবলে মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপনসহ পুরো বিশ্ব স্থবির হয়ে গিয়েছিল, যার রেশ এখনও রয়েছে। একেবারেই অন্য রকম বছর আমরা পার করলাম। সংগত কারণে করোনার প্রকট এখনো বিদ্যমান থাকায় ২০২৩ সালের ইংরেজী নব বর্ষটি অন্যান্য বারের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম।
বছরের শুরুর ও শেষের প্রতি বারের মত যে বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকে, এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। এমনকি ঘরোয়া আনন্দ উৎসবও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মের মধ্যে করতে হবে। গেল বছরের হিসেব খাতায়, যোগের চেয়ে বিয়োগের অংকটাই এখন বড়। সে যাই হোক, আশা করি, নিরাশার দোলা চালেই তো জীবন চলে। মৃত্যুর আগ মুহুর্তে পর্যন্তই তো মানুষ আশায় বাঁচে। আমরাও মানুষ। তাই ক্ষেত্র বিশেষে অতীতের স্বীয় ব্যর্থতার গ্লানিকে পিছনে ঠেলে দিয়ে নতুন বছরের পথ পরিক্রমনে যাত্রাকালে চেনা এ পৃথিবীটার সবার জন্যে সুখ কামনায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ ছাড়া চৌচির কোন মাঠ ফসলের চৈতি ক্ষরায় কান্না কারো কোন দুঃখ ব্যাধি জ্বরায় নির্ঝর বারিধারা বিমূর্ত হাসি আশার একান্ত কাম্য।
মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় স্বাধীন স্বদেশ প্রিয় মাতৃভূমিকে গড়ে তোলার বিমূর্ত অঙ্গীকারে- যে কোন ত্যাগ স্বীকারে হ্যাঁ বলার সৎ সাহসে উদ্দীপ্ত আমরা। দেশের মানুষ অস্থিতিশীল পরিবেশকে পেরিয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকুক- এ প্রত্যাশা করি। নতুন কোন দূর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে যাওয়া অসহায় মানুষদের কান্না আর দেখতে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো নতুন করে কারো প্রাণহানি ঘটুক, আমরা দেখতে চাই না, সড়ক দুর্ঘটনা, বাল্য বিবাহ, শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, ডিভোর্স, পারিবারিক কলহ, খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং, মাদক সেবন, কিশোর গ্যাং, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনলাইন প্রতারণা আমরা দেখতে চাই না। আসুন, সবাই মিলে নতুন বছরে নতুন করে সুন্দরভাবে বাঁচতে ঐক্যবদ্ধ হই। সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়াই। তবেই আমরা ফিরে পাব সেই ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ’।
রাষ্ট্র কিংবা কোন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তির অবহেলায় নতুন কোন দূর্ঘটনায় কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়, কোন স্ত্রী যেন স্বামী- সন্তান হারা না হয়। এ কামনা করি। নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সোনালী আভায় লাখো গোলাপের সুভাসে আন্দোলিত হোক ১৮ কোটি বাঙালি, বাস্তব হোক সেই লাখো বীর শহীদ সূর্য সন্তানদের স্বপ্ন একটি ‘স্বপ্নীল বাংলাদেশ’। পুরোনকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নেয়াই মানুষের সহজাত ধর্ম। আবহমান কাল ধরে মানুষ পুরাতনকে শুকনো ঝরা পাতার মত ত্যাগ করে নতুন কুঁড়ির উদগমন হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে। ইংরেজী নতুন বছর ২০২৩কে জানাই সাদর সম্ভাষণ। এক বুক অনাবিল আনন্দ নিয়ে স্বাগত জানাই নতুন বছরের নবীন প্রভাতের নবীন সূর্যকে।
অতীত সব সময়ই ইতিহাস। এ বছরের ভুলগুলো শুধরে সমস্ত ইতিহাস থেকে ভাল শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের লক্ষে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। ২০২৩ সালে যেন সব অসহনীয় বৈরী পরিবেশকে পেছনে ফেলে কাঙ্খিত, মনোরম, ভালবাসায় এক গুচ্ছ প্রত্যাশা ও আশ্বাসকে খুঁজে পায় অনায়াসে। ইংরেজি নতুন বছর শুরুর দিন থেকে আশার আলোতে প্রত্যাশার পদধ্বনি বেজে উঠুক। সবকিছুর পরও সুখ শান্তির প্রত্যাশায় স্বাগত নতুন বছর ২০২৩ সাল। সৃষ্টিকর্তা সকলকে নিরাপদ রাখুক ও সুখ শান্তি আর আনন্দে কাটুক আমাদের সবার জীবন। স্বাগতম ২০২৩ সাল। সুন্দর আলোর গন্তব্যে পৌঁছে যাক আমাদের সবার আগামীর পথচলা। ভাল থাকুন, ভালবাসুন সব সময়।
লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার, চট্টগ্রাম