ঢাকা: ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা মামলার ফের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন। আগামি ৩০ জানুয়ারি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ডিবি পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। ডিবি পুলিশের সহকারি পুলিশ কমিশনারের নিচে নয় এমন একজন তদন্ত করবেন বলে বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) আদালতের মোহাম্মদপুর থানার উপ পরিদর্শক এশারত বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘রোববার (১ জানুয়ারি) আদালত এ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। আগামি ৩০ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।’
গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এ দিন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আবেদন করেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। তবে কোন সংস্থা তদন্ত করবে সেটা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এটি নির্ধারণ করবেন ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম।
বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন বিষয়ে শুনলাম। মামলার এজাহার, পুলিশ প্রতিবেদন, রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন, প্রসিকিউশনের সাক্ষীর (পিডব্লিউ-১ থেকে পিডব্লিউ-৬ পর্যন্ত) জবানবন্দি ও বিজ্ঞ কৌশলীর বক্তব্যসহ নথি পর্যালোচনা করলাম। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট। ওই বছরের ১০ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জনকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আব্দুর রউফ নয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার চার্জশিটে ১৯ জনকে সাক্ষি করা হয়। ২০২২ সালের ১ মার্চ নয় আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৮৬০ এর ১৪৩/৩২৩/৪২৭ ও ৫০৬ ধারায় আদালত অভিযোগ গঠন করেন।
চার্জশিটভূক্তরা হলেন- নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, মো. সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খাঁন কাজল, তান্না ওরফে তানহা ওরফে মুজাহিদ আজমি তান্না, সিয়াম ও অলি আহমেদ ওরফে জনি।
চার্জশিটে বলা হয়, ‘২০১৮ সালে ৪ আগস্ট রাতে সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাড়িতে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সা বার্নিকাটের বিদায়ী নৈশভোজের আয়োজন করেন। ওই রাতে নৈশভোজের নামে তিনি গণ ফোরামের সভাপতি কামাল হোসেনসহ আরো কয়েকজনের সাথে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে খবর পায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এরপর আনুমানিক রাত ১১টায় ছাত্রলীগের নাইমুল হাসান ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি দল ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা মার্সা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে রাষ্ট্রদূত দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। দলটি বাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে বদিউল আলম, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেন। মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন। বাড়ির প্রধান গেটে ধাক্কাধাক্কি করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে তারা চলে যায়।