বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে নানা প্রজাতিরি অতিথি পাখিদের মেলা

সোমবার, জানুয়ারী ৯, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ভোলা: ভোলা জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে রং-বেরঙের নানা প্রজাতির অতিথি পাখিদের মেলা বসেছে। ভোর হলেই ডুবোচরগুলোতে পাখিদের ডুব সাঁতার, দল বেঁধে খাবার সংগ্রহ অথবা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ানো দেখা যায়। প্রতিদিন অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে নিঝুম এসব দ্বীপের বিস্তৃত প্রান্তর। সুদূর সাইবেরিয়া, তিব্বত ও মোঙ্গলীয়াসহ বিভিন্ন বরফে ঢাকা এলাকা থেকে প্রতি বছর এ সময়টাতে ভোলায় অতিথি পাখিরা আসে। এসব পাখির কিচির-মিচির ডাক ও খনুসুটি প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। বিশ্বব্যাপী বিপন্ন অনেক পাখিরও আগমন ঘটে এ সময়।

শীতের অতিথি পাখিদের এমন আগমনে প্রকৃতির রুপে ভিন্ন শোভা যোগ করে। নভেম্বর প্রথম থেকে অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করে। মার্চের প্রায় শেষ পর্যন্ত থাকে। চরগুলোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় অতিথি পাখিদের বিচরণ। সাগর-নদী, চর আর সবুজ গহীন বনের সমাহারে কান পাতলেই শোনা যায় পাখিদের কিচির-মিচির আওয়াজ। শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ডানা ঝাপটে পাখিদের উড়ে বেড়ানো যে কারো মন ভোলায়। চরগুলোতে চলে পাখিদের খাবার সংগ্রহের প্রতিযোগিতা।

বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষা ঢালচর, মনপুরা, কলাতলীর চর, চর কুকরী মুকরী, চর শাহজালাল, চর শাজাহান, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, চরনিজাম, চর পাতিলা ও ডেগরারচরসহ মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উপকূলবর্তী মাঝের চর, চর চটকিমারা, মদনপুরাসহ বিভিন্ন চরে পাখিদের এমন দৃশ্য দেখা যায়।

এ বিষয়ে পাখি পর্যবেক্ষক ও পর্বতারোহী এমএ মুহিত বলেন, ‘বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবসহ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে প্রতি বছরই তারা ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকায় পাখি শুমারি করে থাকেন। এ অঞ্চলের মধ্যে পাখিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভোলা। এখানে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন অনেক পাখি দেখা যায়। এ সময়টাতে সাইবেরিয়া ও তিব্বতসহ বিভিন্ন এলাকা বরফে ঢেকে থাকায় পাখিদের খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে দীর্ঘ আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে আসে। আবার তারা কিছু দিন থেকে চলে যায়।’

এমএ মুহিত জানান, সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ি উপকূলীয় এলাকাতে ৫৮ প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা গেছে। নির্জন এসব চরে পাখিদের নিজস্বতা রক্ষা পায়। জোয়ারে ডুবে যায় ভাটায় জাগে, এসন কাদা মাটির চরগুলোতেই পাখিরা বেশি আসে। কারণ, এসব চরে পাখিদের বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। চামচ ঠুটো বাটন, ইন্ডীয়ান স্কিমার, ইউরোশিয়ান উত্তরের লেঞ্জাহাঁস, নার্ন সেভেলার, ইউরশিয়ান উইজন, ব্লাক হ্যাডেট আইভিজ পাখি, সৈকত পাখি টার্ন, পালাসস গার্ল, গ্রীল সাংক, রেড সাংকসহ বিভিন্ন দুর্লভ পাখির দেখা পাওয়া যায়।

সাধারণত এসব চরে জুলফি পানচিল, গাঙ্গচিল, সোনাজিরিয়া, উত্তরের লেঞ্জাহাঁস, কালোলেজ জৌরালি, ইউরেশিও গুলিন্দা, ধূসর মাথা টিটি, সিথি হাঁস, খুন্তে হাস, খয়রা চখাচোখি, ছোট পানকৌরী, ছোট বগা, বড় বগা, পিয়ঙ হাঁস, ধূসর বগা, পাতি হাঁস, কালো মাথা গাঙচিল, ছোট ধলাজিরিয়া, ছোট নর্থ জিরিয়া, গো বগা, মেটে রাজ হাঁস, পাতি বাটান, চেগা, পাতি চেগাসহ নানা প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।

চর কুকরী-মুকরীর চর-পাতিলায় দেশি-বিদেশি পাখি দেখার জন্য বন বিভাগ কতৃক নির্মিত হয়েছে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকেই এ চরের অতিথি পাখি সহজেই দেখা যায়। এ ছাড়া, পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু, ছাতা, বেঞ্চ ও একটি ব্যারাকও নির্মাণ করা হয়েছে। শীতের এ সময়টাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখি দেখার জন্য এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা।

চর কুকরী-মুকরীতে পাখি দেখতে আসা আইনজীবী মেজবাউল আলম বলেন, ‘এ এলাকা প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা। অতিথি পাখিদের জন্য চর কুকরী-মুকরী বিখ্যাত। পাখিদের কলকাকলি মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে।’

ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পাখি দেখা মূলত একটি শখ। এ শখের বসেই এখানে অতিথি পাখি দেখতে আসা। এত বিদেশি পাখি এক সাথে দেখতে পাওয়া অসাধারণ অনুভূতির।’

তবে স্থানীয়রা বলছেন, ‘চরাঞ্চলে বসতি নির্মাণ, চারণ ভূমি সংকট আর শিকারীদের কারণে পাখিদের আগমন কিছুটা কমে যাচ্ছে। পাখি শিকার বন্ধ ও জনগণকে আরো বেশি সচেতন করা গেলে পাখিদের আগমন আরো বৃদ্ধি পাবে।’

চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন বলেন, ‘প্রতি শীত মৌসুমেই এখানে পাখি দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় করেন। পাখি সংরক্ষণ ও বিচরণ নির্বিঘ্নে করতে লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে পাখি শিকারে।’

ভোলার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়চার বলেন, ‘প্রতি বছরের মত এ বছরেও আমাদের চরগুলোতে বিপুল পরিমাণ অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। এখানকার চরগুলো অতিথি পাখিদের জন্য বিখ্যাত। এসব পাখিদের কেউ যাতে বিরক্ত বা শিকার করতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রতিটি রেঞ্জ থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে। তারা নিয়মিত টহল দিচ্ছে।’