কক্সবাজার: কক্সবাজারের প্রাণ বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা সব অবৈধ স্থাপনাসহ জেলা শহরের অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান ও মানববন্ধন করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কক্সবাজার জেলা। রোববার (৫ মার্চ) সকালে জেলার প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেলা জাসদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ জাসদ জেলা সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন জাসদ কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক মো. হোসাইন মাসু, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক উদ্দিন চৌধুরী, দফতর সম্পাদক অজিত কুমার দাশ হিমু, জনসংযোগ সম্পাদক মো. আবু তৈয়ব, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুর রশিদ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আবদুল জব্বার, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কায়সার হামিদ, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আলম সিকদার, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. জাকারিয়া, আবুল হাসেম, মো. আলী হাসান, একরামুল হক কন্ট্রাক্টার, জাতীয় যুব জোট এডহক কমিটির সদস্য নুরুল হক, মুন্নি বেগম, জাতীয় যুব জোট কক্সবাজার শহর কমিটির সভাপতি ওসমান গণি, সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. শাহীন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘যে নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল পর্যটন শহর কক্সবাজার, সেই বাঁকখালী নদীর প্রাকৃতিকভাবে গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় গড়ে ওঠা নদীর বিস্তৃত তীরভূমি দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের অনেক প্রভাবশালী কিছু নেতাসহ সমাজের নানা স্তরের প্রভাবশালী, ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা। ফলে দেশের উচ্চ আদালত বাঁকখালী নদী তীর থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদী সৃজনের জন্য ফেরত দিতে আদেশ দেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন গত ২৮ ফেব্রুয়ারী ও ১ মার্চ দুই দিন ব্যাপক অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৫০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখল হয়ে যাওয়া প্রায় ৪০০ একর জায়গা উদ্ধার করে। কিন্তু, অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়, উচ্ছেদ অভিযান চলার পরপরই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে নানামুখী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু হয়ে যায়। প্রশাসনের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দলীয় কক্সবাজার রামু আসনের সাংসদ প্রকাশ্যে ও সরাসরি উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে মাঠে-ময়দানে বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং জেলা প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য। জেলা প্রশাসন দুই দিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর বর্তমানে তা বন্ধ রেখেছেন। এতে করে প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ দিকে, বাঁকখালী নদীর বাংলাবাজার থেকে শুরু করে জেলা শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া পর্যন্ত নদীর তীরভূমিতে শত শত অবৈধ স্থাপনা আজো পর্যন্ত বিদ্যমান। জেলা নদী রক্ষা কমিটি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএসহ সরকারী বিভিন্ন সংস্থার মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করেছে। যে তালিকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের প্রভাবশালী নেতাদের নামও রয়েছে। তাদের অবৈধ স্থাপনা এখনো উচ্ছেদ করা হয়নি। পাশাপাশি, একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যূচক্র রাজনৈতিক নেতাদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় হোটেল-মোটেল অঞ্চলের সুগন্ধা সংযোগ সড়কে সরকারী জমি দখল করে শত কোটি টাকা মূল্যের ড্রাগন মার্কেট ও তৎসংলগ্ন আরো অনেক সরকারী জমি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে শুটকী মার্কেট, রেস্তোরাঁ, প্রসাধনীর মার্কেটসহ অন্যান্য স্থাপনা। কক্সবাজার জেলা শহরে ক্ষমতার জোরে সরকারী ভূমি দখল করে ওই রকম অনেক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে।’
বাঁকখালী নদীর তীরভূমিসহ কক্সবাজারে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারী জমিগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য টাস্কর্ফোসের অভিযান জোরদার করার জোরালো দাবি জানান বক্তারা।