রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা

শুক্রবার, আগস্ট ২৬, ২০২২

প্রিন্ট করুন

এমকে মনির: মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকাল দশটায় আমার জীবনের প্রথম ও ভয়াবহ দূর্ঘটনার শিকার হয়েছিলাম। যা থেকে বেঁচে আসা আল্লাহর অশেষ রহমত ছাড়া আর কিছুই নয়। এ জন্য আল্লাহর দরবারে লাখ-কোটি শুকরিয়া আদায় করছি।

প্রতিদিনের মত সে দিনও (মঙ্গলবার) আমি সকাল সাড়ে আটটায় অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড়ের বায়েজিদ মুখী লেইন ধরে মাঝারি গতিতে বাইক চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ উল্টো পথে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার আমার বাইকের সামনে এসে পড়ে। প্রাইভেটকারটি তখন আমাকে হর্ণ দিয়েছিল কিনা মনে পড়ছে না। তবে আমি তার সামনে থেকে সরারও উপায় ছিল না। কেননা, আমার পেছনে ছিল মালবাহী ট্রাক। আমি একটু মুভ করলেই হয়তো সেটিতে চাপা পড়তে হত। প্রাইভেটকারটির গতি ছিল খুব বেশি। কাছাকাছি হওয়াতে আমিও ব্রেকটা করার সুযোগ পাই নি। আবার স্পটে ব্রেক করলে পেছনের গাড়ি আমার জন্য বিপদ হয়ে আসত। এ দুই সেকেন্ডের মধ্যেই প্রাইভেটকারটির সঙ্গে আমার বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ। বাইকটি সামনের অংশ দুমড়ে গিয়ে আমি পড়লাম প্রাইভেটকারের উপরে, পা নিচে। তবে মুহুর্তেই আমি ওঠে দাঁড়িয়ে যাই। তখন পায়ের হাটু ও কোমরে প্রচন্ড ব্যাথা, এক প্রকার হতভম্ব হয়ে পড়ি। হেলমেট থাকায় মাথায় আঘাত লাগে নি। কার থেকে দুইজন লোক এসে আমাকে ধরল। একই সঙ্গে একজন বাইকার ভাইও দূর্ঘটনা দেখে থামল। শেষমেষ তার সহযোগিতা নিয়ে শহরে চলে আসি।

কার চালকের ভাষ্য তিনি আমাকে হর্ণ দিয়েছেন। অথচ সে উল্টো পথে আসল। আমি তাকে কিছুই বললাম না। মূলত আমি ভুলেই গেছি দোষটা তার ছিল। কার চালক উল্টো পথে এসেও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে চলে গেল। তার সাথে তর্কের সেই শক্তি তখন ছিল না বললেই চলে। তারা অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে। আর আমি একদম চুপ ছিলাম।

যা হোক, আল্লাহ বড় ধরনের ক্ষতি থেকে আমাকে বাঁচিয়েছেন। কারটি না থামিয়ে যদি চালিয়ে চলে যেত, তাহলে কি অবস্থা হত আমার? হয়তো লেখা হত না এ লেখাটিও। বাঁচতাম কিনা আল্লাহই জানেন।

শহরে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ করলাম৷ তখন আমি একদম একা। কাকে ফোন করব বুঝতেছিলাম না। ঋণ করে কেনা একমাত্র সম্বল বাইকটির জন্য মায়া হচ্ছিল। গ্যারেজে গেলে মেকানিকদের একটাই প্রশ্ন। বাইক চালক কি বেঁচে আছে? চালক কোথায়? আমি বললাম, ভাই আমিই চালক। তারা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। এরপর কয়েকজন একসাথে বলতে লাগল, জীবনে কি ভাল করেছেন আল্লাহই জানে, সদকা দিয়ে দিয়েন। গাড়ির অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে, চালক স্পট ডেথ হয়ে গেছে। আপনাকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। দুই রাকায়াত নফল নামাজ পড়ে সদকা দিবেন। মেকানিকদের কথাগুলো কারের চালক ও সঙ্গে থাকা লোকও বলেছিল। দুইটি স্থানের লোকদের কথাগুলো কানে বাজছিল বার বার। সত্যিই মহান আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। তার দরবারে লাখ কোটি শুকরিয়া। এভাবে দূর্ঘটনা হলে কেউ সাধারণত বাঁচার কথা না। শরীরের নিচে অংশ ব্যতীত উপরে তেমন কোন আঘাত লাগে নি আমার। তবে আমি জীবনে কি ভাল কাজ করেছি, তা মনে পড়ছে না। হয়তো আল্লাহ আমাকে ভাল কাজ করার তাগিদ দিচ্ছেন।

বিকালে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে জানতে পারলাম, কোমর ও তলপেটের ব্যাথাটা সিরিয়াস। বেশ জোরে ধাক্কার কারণে বাইকের সাথেই আঘাতটা লেগেছে; যা প্রথমে বুঝতে পারি নি। রাতে ব্যাথা বাড়লো, সকালে আরো বাড়ল। এক্স-রে করালাম, আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার অপেক্ষায় আছি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিন বেলা ওষুধ সেবন করছি। সব মিলিয়ে অবস্থা উন্নতির দিকে। সকলের কাছে দোয়া চাই।

গত পরশু দূর্ঘটনার পর থেকে মুঠোফোনে আমার খোঁজ-খবর নিয়েছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসনসহ রাস্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, বন্ধু, সুজন-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আমার প্রিয় একুশেপত্রিকার সম্পাদক, প্রধান প্রতিবেদক, স্টাফ রিপোর্টারসহ বিভিন্ন গণ মাধ্যমের সাংবাদিক সহকর্মীরা। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা নেই। তবে এটুকু বলব, আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালবাসা আমাকে এ পেশায় আরো দায়িত্বশীল, সচেতন করবে।

দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, সত্যের প্রয়োজনে নিস্বার্থভাবে সাংবাদিকতা করে যেতে আরো একবার শপথবদ্ধ হলাম। সবার প্রতি হৃদয়ের ভালবাসা অবিরাম, অন্তহীন…

লেখক: সাংবাদিক, চট্টগ্রাম। ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।