ঢাকা: ভাড়াটিয়া পরিষদের উদ্যোগে বুধবার (২২ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তিন দফা দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে রেন্ট কন্ট্রোলের অনুমতি ছাড়া বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি না করা; বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কার ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম কমানোর দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে ভাড়াটিয়া পরিষদ সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ‘ঢাকাসহ পুরো দেশের ভাড়াটিয়ারা আজ চরম নির্যাতিত-নিপীড়িত। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন সময়োপযোগী করে সংস্কার না করা এবং এর পূর্ণ বাস্তবায়নের অভাবে ভাড়াটিয়াদের প্রতিনিয়ত নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতে মাসে মাসে ভাড়া বৃদ্ধি ও যখন তখন উচ্ছেদ এখন নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দাবি হচ্ছে- রেন্ট কন্ট্রোলের অনুমতি ছাড়া কোন প্রকার ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না ও অহেতুক কোন অজুহাতে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না।’
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি দ্রুত তিন দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘কিছু দিন পর পর তিতাস গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করে, ডিপিডিসি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করে, ওয়াসা পানির মূল্যবৃদ্ধি করে। এমনিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চ দামে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। তার উপর ইউটিলিটি বিল বৃদ্ধির কারণে তাদের ভোগান্তি আরো বাড়ছে। অপর দিকে, এ মূল্যবৃদ্ধির ঘটনায় বাড়িওয়ালারা ভাড়া বৃদ্ধির নতুন অজুহাত খুঁজে পান। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল ভাড়াটিয়াদের আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হলেও এ সুযোগে চাপ প্রয়োগ করে বাড়িওয়ালারা বাড়ি ভাড়াও বৃদ্ধি করে নেন। বাড়তি ভাড়া দিতে না চাইলে বাসা পরিবর্তন করতে বলেন। একটি ব্যাচেলর বাসা পরিবর্তন করতে ৩-৫ হাজার টাকা এবং ফ্যামিলি বাসা পরিবর্তন করতে ৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এর সাথে সীমাহীন ভোগান্তি তো রয়েছেই। তাই, বাধ্য হয়েই ভাড়াটিয়াদেরকে বাড়িওয়ালার এ অত্যাচার মেনে নিতে হয়।’
এ সময় জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের অধিকাংশ শহরে গ্যাসের লাইনে নিয়মিত গ্যাস থাকে না অথচ আমাদেরকে গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে। পানির লাইনে যে পানি আসে, তা ব্যবহারের অযোগ্য। অথচ পানির বিল দিতে হচ্ছে। এটা মানবাধিকারের চরম লংঘন।’
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিক্যাব) আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক বলেন, ‘সিংহভাগ বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ভাড়া বা দোকান ভাড়ার কোন প্রকার রশিদ দেন না। তারা বাড়ি ভাড়া কম দেখিয়ে সরকারকে আয়কর দেন। মান্ধাতা আমলের বাড়ি ভাড়া দেখিয়ে আয়কর দিবেন অথচ ভাড়াটিয়াদের কাছে বাজার দামের চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। তাই, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ এর যুগোপযোগী সংস্কার করে পূর্ণ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।’
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ভাড়াটিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মোস্তফা, কেন্দ্রীয় নেতা রোকসানা বাহার, জামাল সিকদার, শামীম আহমেদ, মাকসুদুর রহমান, তুহিন চৌধুরী, ফিরোজ আহমেদ, ফৌজিয়া হাসান লিপি, মো. সিরাজসহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন অদলীয় রাজনৈতিক মঞ্চের আহ্বায়ক সাবেক সাংসদ হুমায়ুন কবির হিরু, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস অ্যান্টি করাপশন ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের জেনারেল সেক্রেটারি শরীফ সাকি।