শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

কক্সবাজারে দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত: আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে লোকজন

শনিবার, মে ১৩, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে কক্সবাজারের দিকে। শনিবার (১৩ মে) দুপুর থেকে কক্সবাজারে দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ‘মোখা’ আতংকে কক্সবাজারের উপকূল এলাকার লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে আসছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকে জেলার ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকরা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার জন্য দুর্যোগ উপেক্ষা করেও কাজ করে যাচ্ছে।

ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকে জেলায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ তেমন না হলেও সন্ধ্যা নাগাদ ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যাবে বলে স্থানীয় আবহওয়া অফিস জানিয়েছে।

শনিবার সকাল থেকে কক্সবাজার সদরের পৌর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে দুই শতাধিক মানুষ। শহরের নিচু এলাকা সমিতি পাড়া থেকে এসব লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে।

এখানে আশ্রয় নেয়া শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ঘর নিচু এলাকায়। সমুদ্রের পানিতে ডুবে যেতে পারে। তাই, প্রাণ বাঁচাতে বাচ্চাদের নিয়ে আগেই চলে এসেছি।’

জহুরা বেগম নামে একজন বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ। তাই, আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় শুরু হতে পারে। লোকজন আতংকের মধ্যে রয়েছে।’

কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজনকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রান্না করা ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।’

তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবাইল নম্বর- ০১৮৭২৬১৫১৩২। এছাড়াও, সব উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানান, ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে শনিবার (১৩ মে) বিকাল থেকে প্রবল বর্ষণসহ ঝড়ো হাওয়া শুরু হতে পারে। এতে জেলার নিচু এলাকা ডুবে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

তিনি আরো জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এখান থেকে ইতোমধ্যে আড়াই হাজার লোকজন টেকনাফে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যারা আশ্রয় নেবেন, তাদের খাদ্য সামগ্রী দেয়া হবে। ৫৭৬ আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে পাঁচ লাখের বেশী লোক আশ্রয় নিতে পারবে। জেলার উপকূলীয় এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের আট হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তারা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যানবাহন দিয়েও লোকজনকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতি বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসের আশংকাও রয়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

জেলার প্রশাসক আরো জানান, সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা ও সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরী ত্রাণ হিসেবে দশ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৪৪০ টন চাল, সাত মেট্টিক টন শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও ১৯৪ বান্ডিল ঢেউ টিন মজুত রাখা হয়েছে।

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘণীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ‘মোখা’য় পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাব শুরু হতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস প্রধান আবদুর রহমান জানান, গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর প্রচন্ড উত্তাল রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কক্সবাজারকে দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।