শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

তিন বছরেও গ্রেফতার হয় নি আড়াইহাজারের আলম মিয়ার খুনিরা

বুধবার, মে ৩১, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের আলোর সেতু পাঠাগারে ২০২০ এর ২৭ মে বহুল আলোচিত সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মো. আলম মিয়ার হত্যাকারীরা এখনো পর্যন্ত ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে শিশু সন্তানসহ সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের স্ত্রী জোসনা খাতুন। মঙ্গলবার (৩০ মে) সকালে ঢাকার বেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্রাব) মিলনায়তনের এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এতে জোসনা খাতুন বলেন, ‘২০২০ এর ২৭ মে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের আলোর সেতু পাঠাগারে সন্ত্রাসীরা আমার স্বামী মো. আলম মিয়াকে গুলি করে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। ওই ঘটনায় আরো অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। সে সময় দুই-তিন হাজার মানুষ সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকায় থাকতে পারেনি। এমনকি আমার সাক্ষীরাও অনেকেই সেই হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তী আলম মিয়া যাতে চিকিৎসা নিতে না পারে; সে জন্য সন্ত্রাসীরা অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়িঘর ঘেরাও করে রাখে। হাসপাতালে নিতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় ২০২০ এর ১২ জুন মারা যান। এরপর আমি আড়াই হাজার থানায় মামলা করতে গেলে আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় মামলা নেয়নি। পরবর্তী ২০২০ এর ১৯ জুলাই আমি নারায়ণগঞ্জ কোর্টে (সিআর মামলা নম্বর ৮০/২০) মামলা করি। এ মামলার আসামীরা হলেন মো. তোফাজ্জল (৩৫), মাহাবুব (২৮), শাহ জালাল (২৫), মনির (২৭), আঃ সাত্তার সরকার (৩০), এমদাদুল হক (৩০), নুরুল হক প্রকাশ হক্কা (৫০), দিদার (৩৫), সাইদুল্লাহ (২৫), হানিফা (৩৫), রিপন (২৮), সামছুল হক (৪৩), ইব্রাহী প্রকাশ ইব্রা (২৫), দুলাল (৩৩), খোয়াজ মিয়া (৫৬), আ. বাছেদ (৪২), শামীম (২৫), পরশ আলী (৩০), রিফাত উল্লা প্রকাশ রিফা (৪৮), মোনা মিয়া (৪৮), জাকির (৩০), আ. মতিনসহ (৩৫) অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরবর্তী কোর্ট আসামী গ্রেফতার ও তদন্তের জন্য পুলিশ অফিসার তদন্ত শাখা নারায়ণগঞ্জ জেলাকে নির্দেশ দেন। মাহাবুব উর রহমান নামে একজন অফিসার তদন্ত কাজ শুরু করেন। পরবর্তী তার বদলির কারণে দায়িত্ব নেন নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দার (গ-অঞ্চল) অফিসার ইনচার্জ একেএম এনামুল কবির। তিন কাউকে গ্রেফতার না করে আমাকে ও সাক্ষীদেরকে না ডেকে আসামীদের সাথে যোগসাজসে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ২০২১ এর ২৭ মে একটি মিথ্যা প্রতিবেদন দেন। বিজ্ঞ আদালত আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে কবর থেকে আমার স্বামীর লাশ তুলে ময়না তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু ২০২০ এর ৩ সেপ্টেম্বর কবর থেকে যে লাশ তোলা হয়, তা আমার স্বামীর লাশ ছিল না। আমি সাথে সাথে প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু, একেএম এনামুল কবির তাতে কর্ণপাত না করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠায় এবং ওই লাশের ময়নাতদন্ত শেষে জানা যায়, আমার শ্বশুরের ঔরসজাত নয়। এ বিষয়টি তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ আছে। আমি ওই তদন্তের বিরুদ্ধে ২০২১ এর ২২ সেপ্টেম্বর একটি নারাজি দাখিল করি। যার ফলে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য সিআইডিতে দেয়া হয়। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমাকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আটকে রেখে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে। আমি সেখান থেকে পালিয়ে এসে মামলা করি। সে কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে আছে। গত ৮ জানুয়ারি সিআইডি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার পুলিশ পরির্দশক মো. আবু তাহের খান আমাকে ডাকেন। আমি সেখানে গেলে একটি কাগজে সই নিয়ে চলে যেতে বলেন। পরবর্তী যোগাযোগ করে জানতে পারি, তিনি বদলি হয়ে গেছেন। বর্তমানে যে অফিসার আছেন তিনি জানান, তিনি তেমন কিছু জানেন না। আমার স্বামীর মৃত্যুর সময় আমি অন্তসত্ত্বা ছিলাম। বর্তমানে আমার বাচ্চার বয়স দুই বছর ৪ মাস। বর্তমানে আমি চরম অসহায় অবস্থায় আছি। আসামিদের ভয়ে আমি বাড়িতে যেতে পারি না। বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিয়ে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে জোসনা খাতুন সরকারের কাছে মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।