ঢাকা: শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নি দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরাতন ঢাকার শ্যামপুরে অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম উদ্বোধন করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এ গুদাম উদ্বোধন করেন। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-৪ আসনের সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, প্রকল্পের ঠিকাদার নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মো. আব্দুল্লাহ আল মাকসুসর বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘নিমতলী ও চুরিহাট্টা ট্রাজেডীর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তায় এ রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। অস্থায়ীভাবে নির্মিত এ রাসায়নিক গুদামে শিগগিরই প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দেয়া হবে। টঙ্গীতে এ রকম একটি গুদাম নির্মিত হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ইতিমধ্যে দেশে ব্যবসায় ও শিল্পসহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সরকার অস্থায়ীভাবে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বিশেষ করে পুরাতন ঢাকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমির উপর ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেখানে আমরা ভূমি উন্নয়ন করেছি। বাউন্ডারী নির্মাণ ও অন্যান্য ভৌত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছি। প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন আছে।’
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘রাসায়নিক দ্রব্যাদি, বিস্ফোরক দ্রব্যের জন্য আলাদা গুদামঘরের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার মাধ্যমে পুরান ঢাকা থেকে এগুলো স্থানান্তর করা হবে। আমি আশা করব, দ্রুত যেন এ নীতিমালাটি (পুরান ঢাকা রাসায়নিক দ্রব্যাদি স্থানান্তর নীতিমালা) প্রণয়ন করা হয়। এফবিসিসিআই, ঢাকার চেম্বারসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি যারা এখানে আছেন, তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা করে দ্রুত স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে। এ নীতিমালা করতে যেন আবার কয়েক বছর লেগে না যায়, সে জন্য আমি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবকে অনুরোধ করব। একটি সুনির্দিষ্ট সময় যেমন ১৫ দিন বা এক মাসের মধ্যে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় ও নীতিমালাটি যেন ব্যবসায়বান্ধব হয়। যারা এখানে গুদামে আসবেন, তাদের কিন্তু ফের বিনিয়োগ করতে হবে। তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু, স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় তারা যেন উৎসাহিত বোধ করে, স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। কিছু ছাড় দিয়ে হলেও সেভাবে যেন নীতিমালাটি করা হয়। এমনভাবে যেন কোন নীতিমালা করা না হয়, যেটা বাস্তবতার নিরিখে তাদেরকে আরো নিরুৎসাহিত করবে, সে দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে আমি অনুরোধ করব। এ বিষয়ে আমাদের তরফ হতে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, বিপজ্জনক সব রাসায়নিক সামগ্রী ধীরে ধীরে স্থানান্তর হবে। একটি দুর্যোগপূর্ণ সিটি হিসেবে নয়, আমরা চাই, ঢাকা হোক দুর্যোগ সহনশীল বাসযোগ্য একটি সিটি।
প্রকল্পটি ২০১৯ এর মার্চে শুরু হয় এবং সম্প্রতি এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা হলেও প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৬২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি তথা সরকারি অনুদান ৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বিসিআইসি দিয়েছে চার কোটি ২৪ লাখ টাকা। ফলে, এতে সরকারের প্রায় নয় কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ছয় দশমিক ১৭ একর জমির উপর নির্মিত এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৩৫´×৩৫´×২০´ আকারের ৫৪(চুয়ান্ন)টি গুদাম ও ৭২´×৩৬´ আকারে তিন তলা বিশিষ্ট দুইটি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
বলে রাখা ভাল, পুরান ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো একটি নিরাপদ জায়গায় দ্রুততম সময়ে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ‘উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি লি:’ শ্যামপুর, ঢাকার স্থলে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি জরুরিভিত্তিতে সরকার হাতে নেয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভূক্ত প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত।