শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

গোপালগঞ্জের জিলহাজ শেখ ভর্তি পরীক্ষায় ঢাবির সি ইউনিটে প্রথম

রবিবার, জুন ১১, ২০২৩

প্রিন্ট করুন
মো. জিলহাজ শেখ

টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ: মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করলে মফস্বলে থেকেও প্রথম হয়ে বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যায় তার দৃষ্টান্ত মো. জিলহাজ শেখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষা বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় সি ইউনিটের মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে গোপালগঞ্জের শিক্ষার্থী জিলহাজ। ভর্তি পরীক্ষার নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত ১০০ নম্বরের মধ্যে সে পেয়েছে ৭৯ দশমিক ২৫ নম্বর। তার এ কৃতিত্বে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সহপাঠিদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। আগামীতে এডমিন ক্যাডার হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চান জিলহাজ।

সম্প্রতি গোপালগঞ্জ শহরতলীর পুরাতন মানিকদাহের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মানিকদাহ গ্রামের ব্যবসায়ী শহর আলী শেখ ও গৃহীনি শিরীন আক্তারের ছেলে মো. জিলহাজ শেখ। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে জিলহাজ তৃতীয় ও ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় তার ছিল গভীর আগ্রহ।

পুরাতন মানিকদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারী পড়া শেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী এসএম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে চার দশমিক ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে এসএসসি পাস করে। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরের হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজে ভর্তি হন জিলহাজ। এ কলেজের মানবিক শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃর্তিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জন্য গোপালগঞ্জ শহরের অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। সেখানের বিভিন্ন গাইড লাইন নিয়ে চলে পস্তুতি চলে। ঢাবির সি ইউনিটের মানবিক বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় জিলহাজ শেখ। সেখানে ৭৯ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে। এছাড়া, এসএসসি, এইসএসি ও ভর্তি পরীক্ষার নাম্বার মিলে অর্জন করেন ৯৮ দশমিক ৯১ পয়েন্ট। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

জিলহাজের এ কৃতিত্বে পুরো পরিবারে চলছে আনন্দের বন্যা। নিজের ইচ্ছামত বিষয় নিয়ে পড়শোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশিপাশি মানুষের মত মানুষ হবে দেশের জন্য কাজ করবে প্রত্যাশা পরিবারের সদস্যদের। তার এ সাফল্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাল মিয়া সিটি কলেজ, অপটিমাম কোচিং সেন্টার, সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা আনন্দিত। প্রতিটি ক্লাসে তার উপস্থিতি, অধ্যবসায় ছিল চোখে পড়ার মত। প্রথম স্থান পাওয়ায় অপটিমাম কোচিং সেন্টারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় সংবর্ধনা।

আল্লাহ, মা-বাবা, ভাই-বোন ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রথম স্থান পাওয়া শিক্ষার্থী মো. জিলহাজ শেখ বলেন, ‘পরিবারের সবার আমার প্রতি আস্থা ছিল, যা আমাকে শক্তি হিসাবে কাজে দিয়েছে। এ শক্তিই কাজে লাগিয়ে আমি ভাল ফলাফল করেছি। কলেজে উঠেই আমার স্বপ্ন ছিল ঢাবিতে পড়াশোনা করবো। সে জন্য আমি কলেজ থেকে পস্তুতি নেয়া শুরু করি। তবে, এসএসসিতে চার দশমিক ৮৩ পেয়ে আপসেট ছিলাম। এরপরই ভালভাবে পড়াশোনা করি। সেখান থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। এরপর ঢাবিতে ভর্তিও প্রস্তুতির জন্য গোপালগঞ্জের স্থানীয় কোচিং সেন্টার অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। সেখান থেকে আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে। তবে, আমি কখনো ঘন্টা হিসাবে পড়াশোনা করিনি। রুটিন হিসেবে প্রতিদিনের পড়াশোনা শেষ করেছি। আমার ইচ্ছা, লেখাপড়া শেষে এডমিন ক্যাডার হব। সেখান থেকে দেশের জন্য কাজ করতে চাই।

সহপাঠী আরাফাত রহমান তমাল বলেন, ‘মো. জিলহাজ শেখ আমার সহপাঠী। একই সাথে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। ও প্রথম হয়েছে। এতে আমার প্রচন্ড ভাল লাগছে। আশা করি, ও ভাল অবস্থানে গিয়ে দেশ ও দশের জন্য কাজ করবে।
অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জাইহিন ও আবির হোসেন বলেন, ‘জিলহাজ শেখ ঢাবিতে ভর্তির জন্য আমাদের অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। ওর পড়াশোনা, পরীক্ষার ফলাফল দেখে আমরা ধরে নিয়েছিলম, ও ভাল কিছু করবে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সে আমাদের ও আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম বয়ে এনেছে।’

অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে পরিচালক মো. সাব্বির রহমান বলেন, ‘জিলহাজ শেখ প্রথম হয়ে আমাদের গর্বিত করেছে। আমরা আশায় ছিলাম, ও ভাল রেজাল্ট করবে।’

মো. জিলহাজ শেখের বড় ভাই মিনহাজ শেখ বলেন, ‘আমি আমার ছোট ভাইকে সব সময় পড়ালেখায় সাহায্য করেছি। কিভাবে পড়তে হবে, কি কি বিষয় দেখতে হবে। তার এ রেজাল্টে আমরা খুবই খুশি।’

জিলহাজ শেখের মা শিরীন আক্তার বলেন, ‘ছেলের রেজান্টে আমি প্রচন্ড খুশি। পড়ালেখার জন্য ওকে কখনে বকা দিতে হয়নি। পড়ালেখা সে নিজের ইচ্ছা মত করেছে। ঢাবিতে ভর্তি হয়ে সে তার পড়ালেখা আগের মতই চালিয়ে যাবে। পড়াশোনা শেষ করে মানুষের মত মানুষ হয়ে ফিরে আসবে।’

জিলহাজ শেখের বাবা শহর আলী শেখ বলেন, ‘ছোট বেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি জিলহাজের আগ্রহ ছিল। কখনো ধমক দিয়ে ওকে পড়তে বসাতে হয়নি। আমার ছেলের রেজান্টে আমি খুব খুশি। এখন উচ্চ শিক্ষা শেষ করে পছন্দ মত পেশা বেছে নিয়ে সবার জন্য কাজ করবে- এমনটাই আশা করছি।’

হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজের অধ্যক্ষ পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নিয়ম ও নৈতিকতার মাধ্যমে লেখাপড়া করলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জিলহাজ শেখ। ওর এ ফলাফলে আমরা শিক্ষকরা খুবই আনন্দিত।’