ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্র এক সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এড়িয়ে চলা শুরু করেছিল ! গুজরাট দাঙ্গার জের ধরে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন’ এর অভিযোগে মোদির ভিসার আবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর প্রায় এক দশক ধরে নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারেননি। সে সবই এখন ইতিহাস। সেই যুক্তরাষ্ট্রই তাকে রাষ্ট্রীয় সফরের দাওয়াত দিয়েছে। খবর সিএনএন ও রয়টার্সের।
প্রশ্ন হচ্ছে, মোদি কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন? ২০১৪ সালে ভারতের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মোদিকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। স্বাভাবিকভাবেই সে সময় মোদিকে ভিসার ছাড়পত্র দেয়া হয়। গেল নয় বছরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো উন্নত হয়েছে। বলা হচ্ছে, ‘পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে হোয়াইট হাউসের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেছে নরেন্দ্র মোদির।
মঙ্গলবার (১৯ জুন) নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেন। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে নির্ধারিত সাক্ষাৎ রয়েছে নরেন্দ্র মোদির। এ সফরে দুই দেশের প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ক জোরদার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে এরই মধ্যে বুধবার (২১ জুন) মার্কিন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলার প্রধান ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের মালিক ইলন মাস্ক সাক্ষাৎ করেছেন নরেন্দ্র মোদির সাথে। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদফতর প্রাঙ্গণে বিশ্ব যোগ দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নেন মোদি। সফরসূচি অনুযায়ী এ দিন (বৃহস্পতিবার) মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার কথা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর।
এ দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির আমন্ত্রণে নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। বুধবার (২১ জুন) রাতে হোয়াইট হাউসে মোদিকে স্বাগত জানান জো বাইডেন ও জিল বাইডেন। হোয়াইট হাউসে পৌঁছলে নরেন্দ্র মোদিকে সঙ্গীতের মাধ্যমে বিশেষ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এ সময় বাইডেন ও ফার্স্ট লেডির সাথে তাকে কথা বলতে দেখা যায়। পরে বাইডেন ও জিল বাইডেনের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে বিশেষ উপহার দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতকের শুরুর দিকে হাতে লেখা মার্কিন পুস্তক দেয়া হয় মোদিকে। অতি পুরনো একটি ক্যামেরা ও ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফির ওপর বিশেষ বইও উপহার দেন জো বাইডেন। আর মোদিকে রবার্ট ফ্রস্টের সই করা একটি কবিতার বই দেন জিল বাইডেন। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে নরেন্দ্র মোদি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, নৈশভোজের আয়োজন তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘মোদির সফরটি বাইডেন প্রশাসনের জন্য একটি পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। কারণ, ক্রমবর্ধমান জনতুষ্টি ও মেরুকরণের যুগে নিজেদের পৃথিবীর গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করেছে বাইডেন। অপর দিকে, নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে আপাতদৃষ্টিতে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।’
হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ক্রমবর্ধমান কট্টর রূপ দেখানো ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়নের অভিযোগে মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও বিরোধীদলীয় আইন প্রণেতারা। ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক অংশীদার মনে করলেও মোদির এ সফরকালে এসব উদ্বেগ উত্থাপন করতে বাইডেনের ওপর চাপ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এ ব্যাপারে খুব একটা সমালোচনা হবে না। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লাখ ভারতীয় অভিবাসীর ভোট ব্যাংক আরো একটি বড় বিবেচনার বিষয়।
ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের (ইউএসআইপি) দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড্যানিয়েল এস মার্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারতকে বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি কৌশলগত ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনা করে। কারণ, ভূ-রাজনীতিতে মানবাধিকার ইস্যু ‘সাধারণত পেছনের সারিতেই স্থান পায়’।
এস মার্কি আরো বলেন, ‘এ সফর বাইডেনের জন্য একটি পরীক্ষা হবে। কারণ, মোদির কর্তৃত্ববাদী নীতিকে সমর্থন করা তার উচিত হবে না।’