নিউইয়র্ক: নববর্ষ মানেই নতুন শুরুর আশ্বাস, প্রাণের উচ্ছ্বাস, আর শেকড়কে হৃদয়ে ধারণ করার উপলক্ষ। প্রবাসের মাটিতে সেই উৎসব যখন সাংস্কৃতিক চেতনাকে ঘিরে একত্র করে শ্রমিক, সংস্কৃতিকর্মী আর কমিউনিটির মানুষকে- তখন তা হয়ে ওঠে এক স্মরণীয় মিলনমেলা।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলা নববর্ষকে ঘিরে দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান শ্রমিক সংগঠন অ্যালায়েন্স অফ সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার (অ্যাসাল) লং আইল্যান্ড চ্যাপ্টার আয়োজন করে অনন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবের প্রতিটি মুহূর্তে ছিল বাঙালিয়ানা, শ্রদ্ধা, ও সংহতির মেলবন্ধন। দিনটি ছিলো আসাল লঙ আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের উদ্বোধনী দিন। অনুষ্ঠানমালায় ছিলো সংগঠনের কর্মকর্তাদের পরিচিতি, প্রতিশ্রুতি ও অধিকার আদায়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন লং আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি সেলিম আদমজী।
অ্যাসালের জাতীয় সভাপতি, শ্রমিক নেতা মাফ মিসবাহউদ্দীন ও জাতীয় সেক্রেটারি মোহাম্মদ করিম চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পুরো আয়োজনকে সমর্থন জানান এবং নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান সবার প্রতি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের লং আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক সেলিম আদমজী, করসপন্ডিং সেক্রেটারি সৈয়দ জিল্লুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক রফিক খান, পলিটিকাল ডিরেক্টর মিয়া আলিম পাকি, ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর সিকদার তাবরেজ, ট্রেজারার শওকত আলী, উইমেন্স কমিটি চেয়ার ড. শাহনাজ আলম, অর্গানাইজেশন ডিরেক্টর বাবর ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি আবুল মিসবাহ উদ্দিন (হেলাল), শাহজাহান সিরাজ, কাউসার আহম্মেদ, কাজী ইসলাম জুয়েল ও আবু তৈয়ব।
বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার, ন্যায্য মজুরি ও সামাজিক ন্যায়ের প্রসঙ্গ।
বক্তারা বলেন, ‘প্রবাসে থেকেও বাঙালিরা নিজেদের সংস্কৃতি ও অধিকার নিয়ে সচেতন, এবং অ্যাসালের ভূমিকা সে জায়গায় প্রশংসনীয়।’
নববর্ষের রঙ ছুঁয়ে যায় প্রতিটি পরিবেশনায়। বাংলার গান, শেকড়ের সুর আর দেশীয় খাবারে যেন জেগে ওঠে প্রিয় মাতৃভূমির স্মৃতি। ঘরে তৈরি বিরিয়ানি, চটপটি, ফুসকা, পিঠাপুলি, আমের আচার, মিষ্টি আর গরম চা যেন স্মৃতির ডানায় চড়ে পৌঁছে দেয় গ্রামের বাড়ির উঠোনে, বৈশাখী মেলায়।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মাতৃভূমির টান ছিল হৃদয়ছোঁয়া। শিল্পী জুয়েলের গাওয়া নববর্ষের গানগুলো যেন মুহূর্তেই এনে দেয় শেকড়ের সেই আত্মিক টান “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…”
প্রথম আলো নিউইয়র্ক, ইউএসএ বাংলা, এটিভি ইউএসএ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
অ্যাসালের মূলমন্ত্র “অফ দ্যা কমিউনিটি, ফর দ্যা কমিউনিটি”- এই ভাবনায় তারা যেমন অভিবাসী শ্রমিকদের পাশে থাকছে, তেমনি সমাজে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে গর্বের সঙ্গে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংস্করণের সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, ‘অনুষ্ঠানটিতে এসে মনে হচ্ছে আমরা আত্মপরিচয়ের উদযাপন করছি। প্রবাসে থেকেও বাঙালি হৃদয় জানে- সংগ্রামী মানুষেরাই সমাজ বদলের নেতৃত্ব দেয়। আর সেই সংগ্রামের সঙ্গী হয়ে ওঠে এমন একটি বৈশাখী সন্ধ্যা।’