ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: সরকারি কর্মকর্তাদের কয়েক মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেয়া ও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের তথ্য গোপনের ঘটনায় অভিযুক্ত ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এসইসি সৌর বিদ্যুতের চুক্তি সুরক্ষিত করতে ঘুষ দেয়ার অভিযোগে আদানি গ্রুপের দুই নির্বাহী গৌতম আদানি ও তার ভাতিজা সাগর আদানির নামে এ সমন জারি করে ২১ দিনের মধ্যে এ অভিযোগের উত্তর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
নিউইয়র্ক ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের মাধ্যমে পাঠানো সমনে সতর্ক করা হয়েছে যে, যে সাড়া দিতে ব্যর্থ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ডিফল্ট রায় দেয়া হতে পারে। এসইসি অভিযোগগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের আনা অভিযোগগুলো থেকে আলাদা। তবে, উভয় অভিযোগই একই বৃহৎ ঘুষ কেলেঙ্করির সাথে যুক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এর পূর্বে গৌতম আদানি ও তার ভাতিজা সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। তবে, আদানি গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের এ ফৌজদারি অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেন, গৌতম ও তার ভাতিজা সাগর আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য ভারতীয় কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিতে রাজি হন। আদানির কথিত সহযোগীদের একজন অত্যন্ত চতুরতার সাথে তার ফোন ব্যবহার করে কর্মকর্তাদের দেয়া এ ঘুষের পেমেন্ট ট্র্যাক করেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আদানি ও তার ভাতিজা সাগরসহ সাত আসামি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতের বৃহত্তম সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ পেতে দুই বিলিয়ন ডলার লাভের আশায় চুক্তি সুরক্ষিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে সম্মত হন।
অপর দিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও গৌতম আদানিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে রাহুল জোর দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা উচিত এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
নরেন্দ্র মোদি আদানিকে তদন্তের হাত থেকে রক্ষা করছেন উল্লেখ করে রাহুল বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি ও আদানি একসাথে থাকলে তারা সুরক্ষিত। ভারতে আদানিকে কিছুই করা যাবে না। এ দেশে মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে পাঠানো হয় আর আদানি দুই হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি করে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কারণ, নরেন্দ্র মোদি তাদের রক্ষা করছেন। আদানি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ করেছে।’ কিন্তু, ভারতে আদানির বিরুদ্ধে কোন রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ২০২৩ সালে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে স্টক ম্যানিপুলেশন এবং জালিয়াতির অভিযোগ তোলার পর আদানি নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টায় প্রায় দুই বছর ব্যয় করেন।
যদিও তার বিরুদ্ধে ওঠা ওই অভিযোগ আদানি অস্বীকার করেছেন। তবে, সেই অভিযোগের কারণে মার্কেট সেল-অফ (মার্কেট সেল-অফ হল বৃহৎ পরিমাণ সিকিউরিটিজের দ্রুত বিক্রয়, যার ফলে তার দাম কমে যায়) হয়েছে এবং সে ব্যাপারে ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) তদন্তও করছে।