মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ঋণখেলাপি/চট্টগ্রামের সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলামের চার পুত্রের দেশত্যাগে মানা

সোমবার, মে ১৩, ২০২৪

প্রিন্ট করুন
নুরুল ইসলাম

 

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে উত্তরা ব্যাংকের প্রায় ৩১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলামের চার ছেলের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। রোববার (১২ মে) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের জজ মুজাহিদুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম। যাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তারা হলেন মুজিবুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও ওয়াহিদুল ইসলাম।

নুরুল ইসলামের মালিকানাধীন সানোয়ারা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেড ও ইউনিল্যাক সানোয়ারা বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আছেন মুজিবুর রহমান। বাকি তিন ভাই একই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক পদে আছেন।

মামলার নথি পর্যালোচনায় জানা গেছে, উত্তরা ব্যাংক থেকে দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ২০ কোটি ৭২ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৭ টাকা ঋণ নেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেডের নামে ১৭ কোটি ৯০ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৯ টাকা ও ইউনিল্যাক সানোয়ারা বিডি লিমিটেডের দুই কোটি ৮১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৬৭ টাকা ঋণ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু, এর বিপরীতে ব্যাংকে কোন সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয়নি। বিবাদীদের ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা ও ট্রাস্ট রিসিটের ভিত্তিতে এ ঋণ মঞ্জুর করেছিল ব্যাংক।

নির্ধারিত সময়ে পরিশোধযোগ্য ঋণ হিসেবে আরোপিত সুদ ছিল এক কোটি ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার ১১৭ টাকা। সুদসহ মোট স্থিতি ২২ কোটি ৪০ লাখ নয় হাজার ৮২৪ টাকা। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয় ব্যাংক। এরপরও ঋণ পরিশোধ না করায় সুদ আরোপ হয় আরো আট কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৬২৪ টাকা। এর ফলে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকের মোট দাবি অর্থাৎ দুই প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৩০ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ৪৪৯ টাকা ৩৯ পয়সা।

খেলাপি ঋণ আদায়ে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর উত্তরা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার প্রিন্সিপ্যাল অফিসার এএসএম ফয়জুল আলম চৌধুরী আদালতে মামলা করেন। এতে দুইটি প্রতিষ্ঠানকে বিবাদী করা হয়। এছাড়া, নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সানোয়ারা বেগম এবং পাঁচ ছেলেকেও বিবাদি করা হয়।

এ অবস্থায় গেল ২ মে বাদী আদালতে বিবাদিদের পাসপোর্ট জব্দ করে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আবেদন করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, মামলা পর থেকে শুধুমাত্র একজন ছাড়া আর কোন বিবাদি আদালতে হাজির হননি। ঋণ পরিশোধেরও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং, তারা দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে বাদী জানতে পেরেছেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, ‘ব্যাংকের আবেদনের ওপর রোববার (১২ মে) শুনানি হয়েছে। আদালত চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তারা যাতে আদালতের অনুমতি ব্যতীত কোনভাবে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেই জন্য ইমিগ্রেশন শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

নুরুল ইসলাম একাধারে শিল্পপতি ও রাজনীতিক। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। চট্টগ্রাম-নয় (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসন থেকে তিনি ২০০৮ সালে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের বার আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তবে সেবার তাকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী করা হয়েছিল। মন্ত্রীত্ব যাওয়ার পর অবশ্য রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় আছেন। তার ছেলে মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি একাধিক বার সাংসদ পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন।