/ 
প্রিন্ট করুন
যুক্তরাষ্ট্র: ‘অদম্য বাংলাদেশে অবাক বিশ্ব’ স্লোগানকে সামনে রেখে তিন দশক পূর্বে যাত্রা শুরু করে উত্তর আমেরিকার প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা ফোবানা সম্মেলন। মূলত প্রবাসে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, শিল্প, সংস্কৃতির ঐতিহ্য তুলে ধরতে আয়োজন শুরু হয় এ সম্মেলনের।
তবে, বর্তমানে সংগঠনটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে কিছু ব্যক্তি বিশেষের ক্ষমতা প্রদর্শন ও সন্মান বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে। যার ফলে বছরজুড়ে ঐক্যের গান গাইলেও এবার পৃথক চার স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফোবানা সম্মেলন; যা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গেল ৩০ ও ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার লেবার ডে উইকেন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, মিশিগান ও নিউইয়র্কে পৃথক আয়োজনে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ম্যারিল্যান্ডে ফোবানার ৩৮তম মিলনমেলার আয়োজনে স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী ও সাপ্তাহিক আজকালের সম্পাদক শাহনেওয়াজ। সম্মেলন হোস্ট করে বাংলাদেশি আমেরিকান ফাউন্ডেশন ইনক।
ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনের ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে অনুষ্ঠিত ফোবানার সম্মেলনের আহ্বায়ক ছিলেন রোকসানা পারভীন ও সদস্য সচিব আবু রুমি, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু, চেয়ারপারসন এটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর। এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি)।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদের নেতৃত্বাধীন ফোবানার কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কে। এ কনভেনশনের কনভেনর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্যবসায়ী ও লায়ন্স সিনিয়র ভাইস গর্ভনর আসেফ বারী টুটুল।
গিয়াস আহমেদ জানিয়েছেন, এবারের কনভেনশন দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করা হয়।
‘মোদের গর্ব, মোদের দেশ-হৃদয়ে বাংলাদেশ’ প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাতৃভূমির প্রতি এমন ভালবাসার স্লোগান নিয়ে মিশিগানে অনুষ্ঠিত হয় ফোবানার ৩৮তম কনভেনশন। সেখানে সম্মেলনের মূল কারিগর ছিলেন ফোবানার প্রাক্তন চেয়ারম্যান বেদারুল ইসলাম। যেখানে শুধু মিশিগান নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ছাড়াও পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র কানাডা এমনকি যুক্তরাজ্য থেকেও বাংলাদেশিদের আগমণ ঘটে।
আয়োজকরা আরো জানান, এবারের ৩৮তম ফোবানা কনভেনশনে বাংলাদেশ ও নিউইয়র্কের গুণী চিত্রাভিনেতা, ব্যান্ড তারকা, কণ্ঠশিল্পীসহ স্থানীয় বহু প্রতিভাবান শিল্পী একের পর এক মনোমুগ্ধকর গান করেন। প্রবাসীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দিকনির্দেশনামূলক বিজনেস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম উত্থাপন, স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে প্রবাসীদের ভূমিকা শীর্ষক কার্যক্রম, নারীর ক্ষমতায়ন শীর্ষক কার্যক্রম, সাহিত্য ও কবিতার আসর, ইয়থ ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ, টেলেন্ট শো, ফোবানা স্কলারশীপ প্রদানসহ আরো বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্য দিয়ে শেষ হয় এ সম্মেলন।
এ দিকে, প্রত্যেক আয়োজক নিজেদের অয়োজনের প্রশংসা করেছেন। তাদের দাবি, সম্মেলন ব্যতিক্র ও সফল হয়েছে। এছাড়া দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ছিল নজরকাড়া উপস্থিতি।
যদিও বিভক্তির কুফল দৃশ্যমান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বহু প্রবাসী। সংষ্কৃতির চর্চা কিংবা কমিউনিটির কল্যাণে কাজের বিপরীতে ফোবানা যেন হয়ে উঠেছে ব্যক্তি বিশেষের মর্যাদা বৃদ্ধির হাতিয়ার। তাইতো প্রবাসীরা ফোবানার এ রকম বিবক্ত কার্যক্রমের কড়া সমালোচনা করেছেন।
সাধারণ প্রবাসীরা বলছেন, ‘গেল দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ফোবানায় ভাঙন চলে আসছে। প্রায় প্রতি বছর একটি ফোবানা ভেঙে আরেকটি ফোবানার জন্ম হয়।’
তারা বলছেন, ‘যদি ফোবানা নিয়ে এসব বন্ধ না হয়, তবে আমাদের নতুন প্রজন্ম কি শিখবে? অনুষ্ঠানের নাম করে যদি এভাবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চলে, তবে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের ঐক্য কোনভাবেই সম্ভব না।’
বলে রাখা ভাল, ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংকের একটি ছোট অডিটরিয়ামে অত্যন্ত ছোট পরিসরে ফোবানার জন্ম হয়েছিল।
