চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটির চকবাজার থানায় ভারতে চোখের অপারেশন করতে যাওয়া বিএনপির এক নেতাকে ছাত্রলীগ কর্মীর করা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন। শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে সিটির কাজীর দেউড়ির নসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।
সংবাদ সম্মেলনে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের তারুণ্যের সমাবেশ হয়েছে ১৪ জুন। আর চকবাজার থানায় ছাত্রলীগ কর্মীর করা মামলায় ৪৫ নম্বরে যাকে আসামি করা হয়েছে, মো. ইউসুফ তিনি তখন ভারতের চেন্নাইয়ে ছিলেন। তিনি ঢাকায় এসেছেন ১৫ জুন। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। ২০২৪ সালের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ও প্রশাসন এসব গায়েবি মামলা করছে। অনৈতিকভাবে এসব মামলা করে বিএনপির নেতা কর্মীদের ঘরছাড়া, মাঠছাড়া করতে চায় সরকার। ঠিক যেভাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমাদের ৫৫ জন সাংসদ পদপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে হয়রানী করেছিল। এ পুলিশী হয়রানি বন্ধ করা না হলে আমরা হরতালের মত কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।’
তিনি আরো বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিএনপির যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে কাজীর দেউড়ি মোড়ে দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ কর্মসূচি করার কথা ছিল ১১ জুন। কিন্তু, যুবলীগ একই দিন পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করায় আমরা সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য আমাদের কর্মসূচি পিছিয়ে ১৪ জুন করি। এরপরও যুবলীগ আমাদের সমাবেশের দিন শান্তি সমাবেশের নামে সিটির বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করেছে। ওই দিন আমাদের সমাবেশে যোগদানের জন্য যুবদল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসার পথে চট্টগ্রাম কলেজের সামনে ও জামাল খান মোড়ে তারা হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের আহত করে। পরে, উল্টো বিএনপির নেতা এরশাদ উল্লাহ, এমআই চৌধুরী মামুন ও যুবদল নেতা মোশারফ হোসেন, এমদাদুল হক বাদশাসহ পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে কোতোয়ালি ও চকবাজার থানায় দুইটি মামলা করা হয়। এরপর থেকে পুলিশ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে গণগ্রেফতার শুরু করেছে। সে দিন রাতে সমাবেশ থেকে নিজ বাসায় ফেরার পথে মিরসরাইয়ে ছাত্রদল নেত্রী নাদিয়া নুসরাতকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শারীরিক হেনস্তা করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তাকে গেত ডিসেম্বরে করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
জামালখানে ম্যুরাল ভাংচুরের ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত ছিল না দাবি করে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘পুলিশের করা মামলায় জামালখান মোড়ে ম্যুরাল ভাঙ্গার অভিযোগ করা হয়। অথচ, এ ঘটনার সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোন রকম সম্পর্ক নেই। বরং, এর আগের দিন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিজেদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি করে। এ মারামারি থেকেই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর করা হয়। মামলায় যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা কেউ যদি ওই দিন জামালখানে ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত- এমন প্রমাণ থাকে, ভিডিও ফুটেজে থাকে তাহলে আমরা সব দায় স্বীকার করে নেব।’
তিনি বলেন, ‘বুধবার (১৪ জুন) রাতে চাঁন্দগাওয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করা সাবেক ছাত্রদল নেতা নওশাদকে ফাঁসানোর জন্য এনায়েত বাজারের গোয়াল পাড়া থেকে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। বাকলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শামীম ও জাহাঙ্গীরকে চকবাজার থানা পুলিশ ঘর থেকে ধরে নিয়ে শারিরীক নির্যাতন করা হয়। আমি থানায় গিয়ে তাদের দেখে এসেছি। তাদের সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। যদি মামলার আসামি হয়ও, তাহলে মারার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আপনি গ্রেফতার করতে পারবেন। গায়ে হাত তোলার অধিকার কেউ আপনাদের দেয়নি। সবার নামের লিস্ট করা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শ্রম সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এমএ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, আবদুস সাত্তার, এসএম সাইফুল আলম, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য হারুন জামান, আনোয়ার হোসেন লিপু, মো. কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচএম রাশেদ খান, মহিলাদলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি ও সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরী, থানা বিএনপির সভাপতি মো. আজম, মো. সালাউদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম।