ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) পুরো দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাতটা ৫৫ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে পোস্টের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
পোস্টে বলা হয়েছে, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করছি।’
‘শুধুমাত্র হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোন প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোন গাড়ি চলবে না। সারা দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি আগামীকালকের কর্মসূচি সফল করুন।’
পোস্টে আরো বলা হয়, ‘আমাদের অভিভাবকদের বলছি, আমরা আপনাদেরই সন্তান। আমাদের পাশে দাঁড়ান, রক্ষা করুন। এ লড়াইটা শুধু ছাত্রদের না, দলমত নির্বিশেষে এ দেশের আপামর জনসাধারণের।’
আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। তখন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া, দশ শতাংশ নারী, দশ শতাংশ জেলা, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ।
কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গেল ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গেল ৯ জুলাই আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।
দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এ স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
আন্দোলনকারীরা আদালতের আদেশ মানে না দাবি করে নির্বাহী বিভাগের আদেশের দিকে তাকিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ চালিয়ে আসছেন।
সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কয়েক ঘণ্টা চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হন। সন্ধ্যার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। সেখানে বহু আহত হন।
তাদের সাথে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে ঢাকার ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। অবরোধে পুরো ঢাকা অচল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। শেষ সংবাদ পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ছয় জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে বুধবারও (১৭ জুলাই) ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে সাংবাদিকসহ বহু আহত হয়েছেন।