নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা: আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন উপলক্ষে রোববার (৬ আগস্ট) গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনে প্রতিবাদী সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, সাঁওতালদের প্রতিবাদী গান ও নৃত্য পরিবেশনসহ অন্যান্য কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণরাই মূল শক্তি’।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাঁওতাল নারী-পুরুষরা তাদের অধিকার ও দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বর্ণাঢ্য মিছিল গাইবান্ধা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সাঁওতাল নারী-পুরুষরা প্রতিবাদী গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন। আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ ও নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ, গাইবান্ধার যৌথ উদ্যোগে এসব কর্মসূচির পালন করা হয়।
সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক ভূমি অধিকার কর্মী শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুবায়েত ফেরদৌস, শিক্ষাবিদ মাজহার-উল মান্নান, আদিবাসী বাঙালী সংহতি পরিষদের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম বাবু, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মনীন্দ্রনাথ, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, সদস্য হরেন্দ্র নাথ সিং, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, তৃষ্ণা মুরমু, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবির তনু, আদিবাসী নেতা সুফল হেমব্রম, থমাস হেমব্রম, নিরঞ্জন পাহান, মানবাধিকার কর্মী গোলাম রব্বানী মুসা, কাজী আব্দুল খালেক, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খিলন রবিদাস, ভূমি উদ্ধার কমিটির নেতা ময়নুল ইসলাম, আগস্টিন মিনজি, তুলিপ এক্কা, মাথিয়াস মার্ডি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘পুরো দেশে সাঁওতালসহ আদিবাসী জনগোষ্ঠী মানবাধিকার ও জীবন মানের সার্বিক দিক দিয়ে আজো নানাভাবে বঞ্চিত। সে কারণেই তারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর থেকে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত জনগোষ্ঠী। সমতলের আদিবাসীরা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। ‘শুধু আদিবাসীই বিলুপ্ত হচ্ছে না, তাদের সংস্কৃতি, ভাষাও বিলুপ্ত হচ্ছে’। এরা বাংলাদেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী। অধিকাংশই ভূমিহীন, তাদের হাতে ভূমি নেই।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘আদিবাসীরা জাতীয়তাবাদী ঘৃণার শিকার। ১৯৭১ সালের আগে আমরা যেমন পাকিস্তানিদের ঘৃণার শিকার হয়েছি, তেমনি আজ আমরা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ও সরকারের ঘৃণার শিকার হচ্ছি। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ক্রমাগত সাঁওতালসহ আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সাঁওতালরা তাদের অধিকার ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। সাঁওতাল হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এমন একটি বিভৎস, অমানবিক ঘটনার আজো বিচার কাজ শুরু হয়নি। সাঁওতাল হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদেও কেউ গ্রেফতার করে না। এ নিয়ে সাঁওতালদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
বক্তারা সরকারের প্রতি তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার ও জমি ফেরতের পাশাপাশি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, ‘শুধু তাই নয়, সাঁওতালদের রক্তে ভেজা জমিতে ইপিজেড করতে দেয়া হবে না। আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।’
সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠনেরও দাবি জানানো হয় সমাবেশে।