চট্টগ্রাম: কক্সবাজার জেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের দিনে দুই লাখ মানুষকে যানজটের ভোগান্তি ছাড়াই চট্টগ্রাম সিটিতে আসা-যাওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রস্তুত বাকলিয়া এক্সেস রোড। সড়কের অবকাঠামোগত কাজ ইতিমধ্যে পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এখন চলছে শোভাবর্ধণের কাজ; যা এ মাসেই শেষ হবে।
শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের কালামিয়া বাজারের উত্তর পাশ থেকে নবাব সিরাজুদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরা মসজিদ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ (এক হাজার ৪৫৫ মিটার) সড়কটি নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট প্রশস্থের সড়কটি চার লেনে নির্মিত হয়েছে। সড়কের দুই পাশে ড্রেন কাম ফুটপাত রয়েছে। উভয় পাশের ২০টি সংযোগ সড়কের সাথে রাস্তাটিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে, বহু বছর ধরে যাতায়াত সমস্যায় তীব্রভাবে ভুগতে থাকা বাকলিয়া ও চন্দনপুরার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন। এলাকাকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে রাস্তাকে মূল জমি থেকে প্রায় তিন ফুট উঁচু করা হয়েছে ও বেশ কয়েকটি কালভার্টের মাধ্যমে পানি প্রবাহের সুবিধা করে দেয়া হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ও চউকের প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ টিপু বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনগণকে যানজট এড়িয়ে সিটিতে প্রবেশের সুবিধা করে দিতে সিডিএ এ প্রকল্প নেয়। ফিজিবিলিটি স্টাডির হিসাব মতে, কর্ণফুলী সেতু ও বহদ্দারহাটের মাঝে কোন বাইপাস করা গেলে দেড় লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন এ পথে যাতায়াত করবে। গেল দশ বছরে এ সংখ্যা প্রায় দুই লাখে পৌঁছেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কিন্তু, আরো আগে বাকলিয়া ডিসি রোডে মৌসুমী আবাসিক এলাকায় সিডিএর অনুমোদন নিয়ে নির্মিত দশ তলা একটি ভবনে আটকে যায় সড়কটি। সিডিএ এলাইনমেন্ট কিছুটা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সড়কের কাজটি শেষ করা হয়।’
কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন, ‘কোন প্রকল্প গ্রহণের সময় সিডিএ পরবর্তী ৫০/১০০ বছরের সুবিধা-অসুবিধা মাথায় রাখে। এখানেও সেটি শতভাগ মানা হয়েছে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখে সড়কটিকে স্থিত জমি থেকে তিন ফুট উঁচু করা হয়েছে ও প্রশস্থ ড্রেনের মাধ্যমে পানির সহজ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে, অতি বৃষ্টিতেও সড়কটি পানিতে তলিয়ে যাবে না। এছাড়া, মূল সড়ক দুইটার সংযুক্ত অংশেও জলজটের আশঙ্কা নেই। আমরা ইতিমধ্যে এ দেড় কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ করেছি। এখন শোভাবর্ধণের কাজ চলছে, যা এ মাসের মধ্যে শেষ হবে।’
তিনি বলেন, ‘সড়কটি ছোট হলেও সিটির চকবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর ইত্যাদি এলাকার যানবাহনের চাপ অনেক কমিয়ে আনবে। এছাড়া, কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের প্রধান গন্তব্য চকবাজার, আন্দরকিল্লা, কোর্ট বিল্ডিংয়ে যাতায়াতকে অত্যন্ত সহজ করে দেবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নির্মাণের পর এক বছর সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকি। দুই পাশের বাসিন্দাদের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে- তারা যেন সড়কটি পরিচ্ছন্ন ও দখলমুক্ত রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘সিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির কাজ আমরা শেষ করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে সৌন্দর্য্যবর্ধণের কাজও শেষ হবে। সড়কটির নির্মাণশৈলীতে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে, ফ্লাডলেভেল থেকে ওপরে তোলা হয়েছে সড়কটিকে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরামর্শ মতে- সিটিতে যেন যানজটের নতুন কোন উৎস সৃষ্টি না হয়, সে জন্য শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক ও সিরাজুদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরার সংযুক্ত অংশে ওয়ান-ওয়ে এন্ট্রেন্সের ব্যবস্থা থাকবে।’