চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটির কোতোয়ালী থানাধীন লালদিঘী এলাকায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে তার অনুসারীদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ (২৬) নামে আইনজীবী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো ছয়জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত সৈয়দ ওমর ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিবেদিতা ঘোষ।
আহতরা হলেন- শ্রীবাস দাশ, শারকু দাশ, ছোটন, সুজিত ঘোষ, উৎপল ও এনামুল হক। আহতদের উদ্ধার করে চমেকর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরত সনাতনীরা আদালত চত্বরে প্রায় তিনঘণ্টা পুলিশের প্রিজনভ্যান আটকে রাখেন। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ও লাঠিচার্জ করে। এরপর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে রঙ্গম কনভেনশন হলের সামনে অবস্থান নেন। এর মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অনেকে গুরুতর আহত হন। এতেই আইনজীবীকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিলে মারা যান। নিহত আইনজীবীর বাড়ি লোহাগাড়া থানার চুনতি।
ছত্রভঙ্গ হয়ে ইসকনের সদস্যরা আদালতের কেন্দ্রীয় মসজিদের জানালার কাচ ভাঙচুর করার অভিযোগ করেন মুসল্লিরা। এ ছাড়া, আইনজীবীদের তিনটি প্রাইভেটকার ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল চারটা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে ইসকন সদস্যদের সংঘর্ষ চলছে।
জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্টদ্রোহ মামলায় ইসকনের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম আদালত এই আদেশ দেন। শুনানির পর ইসকন নেতাকে বহনকারী পুলিশের প্রিজনভ্যান আড়াই ঘণ্টা আটকে রাখে বিক্ষোভ করেন ইসকনের সদস্যরা। পরে বিকাল পৌনে তিনটার দিকে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় অন্তত দশজন আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বহন করা প্রিজনভ্যান আদালত প্রাঙ্গণে আড়াই ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। আজ দুপুর পৌনে ১২টা থেকে ইসকন সদস্যরা আদালতে প্রিজনভ্যান আটকে রাখেন। পরে রাস্তা ফাঁকা করতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়লে ইসকন কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন ভবনে ও গাড়িতে হামলা শুরু করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে। পরে শুনেছি একজন আইনজীবি মারা গেছেন।
‘
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকার ৪ ও চট্টগ্রামে ৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।