বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

চট্টগ্রামে ২০২২ এ যক্ষ্মায় আক্রান্ত ১৫ হাজার ৯৯১

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৩, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলায় ২০২২ সালে ১৫ হাজার ৯৯১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে শিশু ৬৬৬ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে চিকিৎসায় সুস্থতার হার ৯৭ শতাংশ। বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালনকালে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আক্রান্তদের মধ্যে ক্যাটাগরি-১ অনুযায়ী যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩৩ জন ও পুনরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৫৮ জন। শনাক্ত মোট যক্ষা রোগীর মধ্যে ফুসফুস আক্রান্তের সংখ্যা দশ হাজার ৫৪৫ জন ও ফুসফুস-বর্হিভূত রোগী পাঁচ হাজার ৪৪৬ জন। যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে ছয় হাজার ৩৯৬ জনের এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যক্ষা রোগে আক্রান্তদের এখন চিকিৎসায় সুস্থতার হার অনেক বেশি। ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষা নির্মূল করতে পারি!’- প্রতিপাদ্যকে লক্ষ্যে রেখে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) চট্টগ্রামে পালন করা হয় বিশ্ব যক্ষা দিবস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও সহযোগী সংস্থাসমূহ যৌথভাবে বৃহস্পতিবার সকালে সিটির আন্দরকিল্লাস্থ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আয়োজিত বিশ্ব যক্ষা দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভার পূর্বে বেলুন উড়িয়ে বিশ্ব যক্ষা দিবস-২০২৩ এর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার সেখ ফজলে রাব্বি। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। এরপর দিবসটি উপলক্ষে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি আন্দরকিল্লা হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে পুনরায় সিভিল সার্জন অফিসের সামনে এসে শেষ হয়।

অনুষ্ঠানে সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষা শুধু ফুসফুসের ব্যাধি নয়। এটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি, যেটা মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। শেখ হাসিনা সরকারের আন্তরিকতার কারণে দেশের হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যক্ষা রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা-সেবা পাচ্ছে। সরকারী হাসপাতালগুলোতে যক্ষা রোগের পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা সামগ্রীও রয়েছে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। পরিবারে যক্ষা রোগী থাকলে শিশুসহ অন্য সবাইকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে যক্ষা নির্মূল সম্ভব।’

তিনি আরো বলেন, ‘মস্তিস্ক থেকে শুরু করে ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি ও হাড়সহ শরীরের যে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যক্ষার সংক্রমণ হতে পারে। যক্ষা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। ফুসফুসে যক্ষার জীবাণু সংক্রমিত হলে টানা কয়েক সপ্তাহ কাশি ও কফের সাথে রক্ত যায়। আমাদের এমন কোন অঙ্গ নেই; যেখানে যক্ষা হয় না।’

মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ জন্মগতভাবে যক্ষা রোগের জীবাণু বহন করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি। পরিবেশ দূষণ, দরিদ্রতা, মাদকের আসক্তি ও অপুষ্টি যক্ষার হার বাড়ার অন্যতম কারণ। এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ভয় না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে, নির্দিষ্ট সময়ে এ রোগ পুরোপুরি সেরে যাবে। এখন যক্ষা হলে রক্ষা মেলে।’

তিনি আরো বলেন, ‘নিয়মিত, ক্রমাগত সঠিক মাত্রায় ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ সেবন করলে যক্ষা ভাল হয়। কোভিডকালীন যক্ষা কার্যক্রম সাময়িক ব্যাহত হলেও ২০২২ সালে সে অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রেখে ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।’

জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাক্তার সুমন বড়ুয়া, চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার গোলাম মোস্তফা জামাল, বিভাগীয় টিবি এক্সপার্ট (এনটিপি) ডাক্তার বিপ্লব পালিত, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডাক্তার মো. নুরুল হায়দার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডাক্তার এফএম জাহিদ ও নাটাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক।

স্বাগত বক্তব্য দেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডাক্তার মো. নওশাদ খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডিএসএমও ডাক্তার আবদুল্লাহ-হির-রাফি-অঝোর। বক্তব্য দেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার গাজী মো. নূর হোসেন, ব্র্যাকের ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মো. জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, মমতার প্রোগ্রাম ম্যানেজার এসএম আরিফ, এসএমসির ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. ফাইজুর রহমান, নিষ্কৃতির প্রোগ্রাম অফিসার মাহমুদুল ইসলাম অপু।

অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল এনজিও সংস্থা-ব্র্যাক, মমতা, ইমেজ, নিস্কৃতি, আইসিডিডিআরবি, আশার আলো, নাটাব, আইআরডি, বাডার্স, আশার আলো সোসাইটি, এসএমসি ও লেপ্রসি মিশন।