শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

চোখ ওঠায় আক্রান্ত কারো চোখের দিকে তাকালে কারোর চোখ ওঠে না

শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ডাক্তার মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ: ঋতু পরিবর্তনের কারণে এ সময় চোখের রোগবালাই হয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে চোখ ওঠা। এটি আসলে একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। কনজাংটিভাইটিস বা চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা বলে। চোখ ওঠার মূল কারণ ভাইরাসজনিত ও এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। চোখ ওঠায় আক্রান্ত কারো চোখের দিকে তাকালে কারোর চোখ ওঠে না। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত চোখ কিছু দিন পর ভাল হয়ে যায় ঠিক, কিন্তু আশপাশে অনেককেই আক্রান্ত করে বা করতে পারে। তবে চোখ ওঠা রোগী মূলত সে তার নিজের জন্য সমস্যা নয়, বরং অন্যের জন্য সমস্যা। কারো চোখ ওঠা হয়ত তিন দিনে ভাল হয়ে যায়, কারোর আবার তিন সপ্তাহ লাগতে পারে। সেটা নির্ভর করে কার কী ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত করেছে এবং সেই রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন তার ওপর।

চোখের সাদা অংশ একটি পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে; যার নাম কনজাংটিভা। এ কনজাংটিভায় যখন সংক্রমণ বা প্রদাহ হয়, তখন এটি লালচে হয়। এর সঙ্গে আরো কিছু উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন- চুলকানি, অস্বস্তি, ব্যথা, আলোক সংবেদনশীলতা, ঘন সাদাটে বা হলদেটে নিঃসরণ ইত্যাদি। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ কনজাংটিভাইটিসের কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস। তবে অ্যালার্জি, ঠান্ডা সর্দি বা চোখ কোন রাসায়নিক বা ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে এলেও কনজাংটিভায় প্রদাহ হয় ও চোখ লাল দেখায়। ভাইরাসজনিত চোখ ওঠায় পাতলা বর্ণহীন পানি পড়ে বেশি। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত হলে নিঃসরণটি ঘন ও একটু হলদেটে হয়ে থাকে। আর ঠান্ডার সময় মৃদু চোখ উঠতে দেখা যায়। তবে যে কোন মৌসুমেই চোখ উঠতে পারে।

চোখ উঠা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ: চোখের চারপাশে হালকা লাল রং হতে পারে; চোখের পাতা ফুলে যায়; চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে; চোখ থেকে পানি পড়তে পারে; চোখ থেকে ঘন হলুদ অথবা সবুজাভ হলুদ রঙের ময়লা জাতীয় পদার্থ বের হতে পারে; সকালে ঘুম থেকে উঠার পর চোখের দুই পাতা লেগে থাকে; নবজাতকের চোখ উঠা একটি বিশেষ বিষয়; ওষুধপত্র দিলেও নবজাতকের চোখ দুই-তিন দিন লাল অথবা ফোলা থাকতে পারে ইত্যাদি।

চোখ উঠলে যা করতে হবে: যে সব কারণে বিশেষত এলার্জিক কোন বস্তু, কেমিক্যালস কিংবা পরিবেশ দ্বারা চোখ উঠে, সে সব বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে। আর যদি আপনার শিশুর চোখ উঠে থাকে, সে ক্ষেত্রেও হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে ও চোখের পাতাগুলো খোলা রাখতে হবে। বড় বাচ্চারা চোখে কালো চশমা পরতে পারে।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন: যখন আপনার শিশুর চোখ থেকে ঘন হলুদ কিংবা সবুজাভ হলুদ রঙের তরল পদার্থ বের হয়। চোখ ব্যথার কথা বলে। প্রচণ্ড সূর্যালোকেও চোখ ব্যথা করলে। যখন চোখে একদমই কিছু দেখতে পারে না অথবা পারলেও দেখতে সমস্যা হয়। যখন পরিবেশগত বিষয়ে কিংবা কোন এলার্জিক বস্তুর জন্য চোখে অসুবিধা অনুভব করে। শিশুর বয়স যদি দুই মাসের কম হয়। চোখের পাতা যদি ফুলে উঠে কিংবা লাল হয়ে যায়।

যা করবেন না: কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। শিশুকে জোর করে চোখ খুলতে বলা যাবে না।

চোখ উঠা থেকে যে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে: কর্নিয়ায় ঘা ও কর্নিয়া ছিদ্র হয়ে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রতিকার: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখ উঠা বা কনজাংটিভাইটিস পরিবারের একজনের থেকে অন্যজনের হতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সবার পৃথক কাপড় ও তোয়ালে থাকতে হবে। পুরো হাত ভালমত পরিষ্কার করতে হবে। যে সব বিষয় শিশুর জন্য এলার্জিক, তা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।

চোখ উঠা রোগীর ঘরোয়া পরামর্শ: চোখ উঠা রোগ থেকে বাঁচতে হলে কিছু পরামর্শ মেনে চলা উত্তম। যেমন- এক জনের ব্যবহৃত তোয়ালে অন্যজন ব্যবহার না করা। আক্রান্ত চোখ স্পর্শ করলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। ডাক্তারের পরামর্শমত সঠিকভাবে সঠিক সময় ওষুধ নেয়া। ঘনঘন চোখ ঘষা থেকে বিরত থাকা ও চোখে বার বার পানির ঝাপসা না দেয়া। অসুস্থ চোখে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যাবে না। ধূলা-বালি ও সূর্যের আলো থেকে চোখ রক্ষায় কাল সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। পুকুরের পানিতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। চোখ উঠা ছোঁয়াচে রোগ। তাই পরিবারের অন্যান্যদের সাথে মেলামেশা কমানো উচিৎ। শিশুদের চোখ উঠলে হালকা বা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে। চোখের পাতা খোলা রাখতে হবে। তবে জোর করে চোখ খোলার চেষ্টা করবেন না। চোখের যে কোন রোগেই অবহেলা করবেন না। কারণ সামান্য ভুলের জন্য সারা জীবন আফসোস করা লাগতে পারে।ঠান্ডা পানির ভাপ দেয়া: অ্যালার্জি প্রভাবিত জায়গাগুলোতে ঠান্ডা জলের প্রভাব দিলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। ঠান্ডা জলে কাপড় ভিজিয়ে ওই অ্যালার্জি সমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে রাখা যেতে পারে অথবা ক্যামোমিল টী-ব্যাগও ঠান্ডা ভাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শসা: শসা গোল গোল করে চোখের উপর দেয়া যেতে পারে। শসা চোখের ফোলাভাব ও চুলকানি ইত্যাদি কমায়।
গোলাপ জল: গোলাপ জল চোখের অ্যালার্জি নিরাময়ের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান।এটি চোখের জ্বালাকে প্রশমিত করে, ঠান্ডা রাখে ও চোখকে পরিষ্কার রাখে। এটি চোখের ড্রপ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
গ্রীন টি: গ্রীন টি অ্যালার্জির জন্য সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি ওষুধ। এটি চোখের প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতিতে অ্যান্টি প্রদাহজনক ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। উপরের পরামর্শগুলো কেবলই সচেতনতার জন্য। চোখের যে কোন সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

চোখ ওঠা রোগের ইতিহাস: চোখের কনজাঙ্কটিভায় ভাইরাসজনিত এক ধরনে সংক্রমণ বাংলাদেশে পরিচিত ‘চোখ ওঠা’ নামে। অতি পরিচিত ও অত্যন্ত্য সংক্রামক এ রোগটির ওপার বাংলায় রয়েছে আরো একটি নাম। আর সেই নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য যোগসূত্র! ১৯৭১ সালে মহামারী আকারে পশ্চিম বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। রোগটি পূর্ব বাংলায় চলা মুক্তিযুদ্ধের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসা বাঙালি শরণার্থীদের কারণেই ছড়িয়েছিল বলে এর নাম দেয়া হয় ‘জয় বাংলা’ রোগ! ‘জয় বাংলা’র প্রকোপ ছিল এতটাই যে, সে সময় ৫০ লাখেরও বেশি লোক এ রোগে ভুগেছেন। তখনকার পত্রিকাগুলোর সংবাদ ঘাঁটলে এ সংখ্যা আরো বেশি বলেই জানা যায়। এ রোগ কল্যাণী, চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া, বেতাই, করিমপুর, শিকারপুর শরণার্থী শিবিরে ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় এটি আক্রমণ করে কলকাতা শহরের শিবিরগুলোর শরণার্থীদেরও। আক্রান্তদের মধ্যে শরণার্থীরা যেমন ছিলেন, তেমনি সংক্রামক এ রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন স্থানীয় অধিবাসীরাও। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি হিসাব মতে, প্রায় পাঁচ লাখ লোক অ্যাকিউট হেমোরেগেজিং কনজাঙ্কটিভাইটিসে চিকিৎসা সেবা নেন। কলকাতা শহরের শতকরা ৬৫ জন লোক এ রোগে আক্রান্ত হন বলে জানিয়েছিলেন জর্জ চাইল্ডস কোন তার ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অফ । এই এএইচসি ‘চোখ ওঠা’ বা কনজাঙ্কটিভাইটিসের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভ্যারাইটি। ‘জয় বাংলা’য় কলকাতা শহর কতটা বিপর্যস্ত ছিল ১৯৭১ এর ৪ জুন দৈনিক যুগান্তরের একটি শিরোনামে তা স্পষ্ট। ‘চোখের রোগে ট্রেন বন্ধের আশঙ্কা’ শিরোনামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘চোখ-ওঠায় রেলওয়ের বিপুল সংখ্যক কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের ৪৯ জন গার্ড এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ছুটি নিয়েছেন। বহুসংখ্যক বুকিং ক্লার্ক চোখের রোগে আক্রান্ত। সাধারণ ছুটিতে থাকা ২৭ কর্মীর ছুটি বাতিল করেও ট্রেন-চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’ চোখ-ওঠায় বাতিল হয়ে গেছে ফুটবল ম্যাচ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি স্কুল। পত্রিকার পাতায় পাতায় চোখের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার বিজ্ঞাপন, কেউ-বা দিচ্ছে হোমিওপ্যাথিকের বিজ্ঞাপন, কেউ-বা সালফাসিটল কিংবা তরল সাবানের বিজ্ঞাপন। এ রোগ নিয়ে মশকরা করতেও ছাড়ে নি তখনকার দৈনিকগুলো। পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্রের চোখে চশমা। গোড়াতেই পাত্রীর প্রশ্ন. ‘চোখ উঠেছে’? চোখ-ওঠা নিয়ে যুগান্তর এ কাটুনিস্ট এঁকেছেন এমনই অনবদ্য এক কার্টুন।তখনকার যুগান্তর এর রোববারের সাময়িকী রম্য করে লিখেছে, ‘জ্বালা দিতে ঠাঁই নাই জ্বালা দেয় সতীনের ভাই, কলকাতার লোকের হয়েছে সেই দশা। একেই তো জ্বালা-যন্ত্রণার সীমা নেই, তার ওপরে কোথা থেকে এক চোখের রোগ এসে চেপে বসল। ‘জয় বাংলা জয় বাংলা’ ডাক ছাড়তে ছাড়তে সারা শহর যেন কটা দিনের জন্যে… ধুলি পড়ে একেবারে কলুর বলদ হয়ে গেল!’ বাংলাদেশি সাহিত্যেও ছাপ পড়েছে এ ‘জয় বাংলা’র। আহমদ ছফা ‘অলাতচক্র’ উপন্যাসে লিখেছেন, ‘কলকাতা শহরের লোকদের মুখে ইদানিং (১৯৭১) ‘জয় বাংলা’ শব্দটি শুনলে আমার অস্তিত্বটা যেন কুঁকড়ে আসতে চায়। শেয়ালদার মোড়ে মোড়ে সবচে সস্তা, সবচে ঠুনকো স্পঞ্জের স্যান্ডেলের নাম ‘জয় বাংলা’ স্যান্ডেল।… যে চোখ-ওঠা রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, কলকাতার মানুষ মমতাবশত তারও নামকরণ করেছিল ‘জয় বাংলা’।’ চোখ-ওঠা পশ্চিমবঙ্গে এত বেশি প্রভাব ফেলেছিল একাত্তরে, স্থানীয় গণ মাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণ মাধ্যমেও উঠে এসেছিল জয় বাংলার প্রাদুর্ভাবের কথা। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চাশ লক্ষ লোকের জয় বাংলায় আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ ছাপে। বাংলাদেশের সংবাদ সংগ্রহে এসে পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি গণ মাধ্যমের কয়েকজন কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন চোখের এ প্রদাহে। এখনো এ রোগটি পশ্চিমবঙ্গের অনেক স্থানেই ‘জয় বাংলা’ বলে পরিচিত বলে জানিয়েছেন কবি ও সাংবাদিক প্রদীপ কর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখনো আমাদের ওখানকার গ্রামগুলোতে এ রোগকে জয় বাংলাই বলে। আমার নিজস্ব ধারণা, বাংলাদেশের পতাকায় যে সবুজের ভেতরে লাল সূর্য দেখা যায়, সে রকমই এ রোগে চোখ টকটকে লাল হয়ে ওঠে বলেই হয়ত একে এখনো জয় বাংলা বলে।’ তিনি জানান, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়সহ পশ্চিমবঙ্গের অনেক সাহিত্যিকের সাহিত্য কর্মে এ ‘জয় বাংলা’র উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রয়াত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদও তার লেখায় এ রোগের কথা উল্লেখ করেছেন। কলকাতাবাসীকে চরম অসুবিধায় ফেলে দিলেও যুদ্ধের ময়দানে এটি সুবিধা করে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের! ডি ডি প্রমাণিক তার হবেষণা নিবন্ধ ‘জয় বাংলা: অ্যান এপিডেমিক কনজাঙ্কটিভাইটিস ইন ইন্ডিয়া’তে জানান পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি এ রোগে আক্রান্ত হয় পূর্ব বাংলায় অবস্থান করা পাকিস্তানি সৈন্যরাও। পাকবাহিনীর ভোগান্তিটা একটু বেশিই ছিল। কারণ এ রোগের সঙ্গে তারা খুব একটা পরিচিত ছিল না। অনাকাঙ্ক্ষিত এ মহামারী কোন কোন ক্ষেত্রে ট্যাকটিকালি গেরিলা যোদ্ধাদের কিছুটা সুবিধা এনে দিয়েছিল। সে কারণে মুক্তিযোদ্ধারাই একে ডাকতে শুরু করেন ‘জয় বাংলা রোগ’ নামে! ৫১ বছর আগের সে সব দিনের স্মৃতি আজো অমলিন কালের সাক্ষী হয়ে থাকা পশ্চিম বাংলার অনেক অঞ্চলের স্থানীয়দের কাছে। এখনো তাই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে উঠে আসে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের অনন্য সেই স্লোগানের নাম!

হোমিও সমাধান: রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয়- এ জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে ডাক্তার হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে চোখ উঠা রোগসহ যে কোন জটিল ও কঠিন রোগীর চিকিৎসা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ভিওিক লক্ষণ সমষ্টি নির্ভর ও ধাতুগতভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে চোখ উঠা রোগ চিকিৎসা সম্ভব। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা যে সব মেডিসিন প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করে থাকেন: বাম দিকের চোখ ওঠার এক চমৎকার আরােগ্যকর ওষুধ রাসটক্স এর লক্ষণ চোখ ব্যথা, চোখের পাতা ফোলা, গরম জল পড়া, আলোক সংবেদী। চোখ জ্বলে, ঘন পিঁচুটিতে চোখ জুড়ে থাকে। ঠান্ডায় যন্ত্রণা বাড়ে, চোখ বুজে থাকলে আরাম লাগে। জলে বা বৃষ্টিতে ভিজে চোখের পাতার পক্ষাঘাত। ৬ বা ৩০ শক্তি থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চশক্তি। ডান চক্ষু উঠলে এপিস মেল এর অন্যতম লক্ষন স্ফীতি / চামড়ার চুলকানিযুক্ত ফোলা/অ্যালার্জি । চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়ার ফলে চোখের পাতা খুলতে পারে না। দুইটি চক্ষুই উঠেছে। চক্ষু রক্তবর্ণ টনটন ঝনঝন করকর করছে, পিচুটিতে চোখ দুটি জুড়ে যাচ্ছে। সিফিলিনাম দুইটি ডােজ দিয়ে আর্জেন্ট নাই ২০০। আর যে সব রোগে রক্তজমা ও মুখচোখ লাল বর্ণ হয় সে সব রোগের ওষুধ হিসেবে বেলেডোনা ব্যবহার হয়। চোখ ওঠা, সাথে ব্যাথা, আলো বা রোদ সহ্য করতে পারে না – বেলেডোনা ৩। চোখ থেকে অনেক সময় অ্যাসিডিক কিছু বা ঝাঁঝালো কিছু নির্গমণ হয়, যার ফলে চোখে জ্বালা করে, প্রদাহ হয়, চোখ দিয়ে জল বের হয়। এ রকম হলে ইউফ্র্যাসিয়া নামক হোমিওপ্যথিক ওষুধটি ব্যবহৃত হয়। যখন চোখ দিয়ে একটা হলুদ মতন পাতলা স্রাব বের হয়, চোখে জ্বালা করে ও চুলকায়, চোখের পাতাগুলো মনে হয় দানা বেঁধে আছে, তখন পালসাটিলা নামক হোমিওপ্যাথিক ওষুধটি ব্যবহার করতে হবে।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি