ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।’ নিজের লেখা নয়া বইতে এমন দাবি করেছেন তিনি। সংবাদ পলিটিকোর।
‘সেভ আমেরিকা’ নামে ট্রাম্পের বইটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে। ওই বইতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেআইনি কিছু করলে জাকারবার্গকে আজীবন জেলে থাকতে হবে।’
জাকারবার্গ ও ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব বহু দিনের। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থকেরা যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলা চালানোর পর দিনই ট্রাম্পের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। অভিযোগ, ট্রাম্পের ফেসবুক পোস্টে সহিংসতায় যুক্ত থাকা লোকজনের প্রশংসা করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ফের চালু করা হয়। তবে, ভবিষ্যতে নীতিমালা লঙ্ঘনের হুমকির কথা বলে তার অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে শাস্তি আরো বর্ধিত করা হয়। তিন বছর পর চলতি বছরের জুলাইয়ে ট্রাম্পের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ফিরে পান ট্রাম্প।
অন্য দিকে, ট্রাম্প নিয়মিত জাকারবার্গের বিরুদ্ধে গেল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে আসছেন। এবার বই লিখে তাতে ফের ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে অভিযোগের তোপ দাগলেন তিনি।
ট্রাম্প সেখানে লিখেছেন, ‘আমার সাথে দেখা করতে ওভাল অফিসে (যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক কাজের স্থান) আসেন। তিনি (জাকারবার্গ) তার সুন্দরী স্ত্রীকে নৈশভোজে নিয়ে আসতেন। যে কেউ যতটা সুন্দর হতে পারে, ততটা সুন্দর সাজতেন। সর্বদা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সত্যিকারের চক্রান্তে লজ্জাজনক লক বাক্স ইনস্টল করার ষড়যন্ত্র করতেন।’
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় জাকারবার্গ ও তার স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান ট্রাম্পের নির্বাচনী অবকাঠামো তহবিলে ৪২ কোটি ডলার অনুদানের কথা উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প দাবি করেন, জাকারবার্গ সে সময় তাকে বলেছিলেন, ফেসবুকে ট্রাম্পের মত কেউ নেই। কিন্তু, একই সাথে তিনি আমার বিরুদ্ধে চলে গেছেন।
বইতে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমরা তাকে (জাকারবার্গ) নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এবার যদি তিনি অবৈধ কিছু করেন, তবে তাকে বাকি জীবন জেলে কাটাতে হবে- যেমনটি ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতারণাকারী অন্যান্যরাও করবেন।’
গেল জুলাইয়ে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি নির্বাচনে জালিয়াতদের এমন পর্যায়ে নিয়ে যাবেন, যা পূর্বে কখনো দেখা যায়নি এবং তাদেরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য জেলে পাঠাবেন। আমরা এরমধ্যেই জানি, আপনি কে। এটা কর না! জাকারবাকস, সাবধানে থেক।
যদিও ট্রাম্পের অভিযোগ ও সতর্কতার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনি মেটা। চলতি সপ্তাহের শুরুতে হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান জিম জর্ডানকে পত্র পাঠান জাকারবার্গ। সেখানে তিনি স্বীকার করেন, জো বাইডেনের প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা ২০২১ সালে করোনা ভাইরাস সামগ্রী ‘সেন্সর’ করার জন্য ফেসবুককে বার বার চাপ দিয়েছিলেন।
জাকারবার্গ পত্রে আরো উল্লেখ করেন, তিনি বিশ্বাস করেন, সরকারের চাপ ভুল ছিল। সে সময় এ সম্পর্কে কথা না বলার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি। জাকারবার্গ ঘোষণা করেছেন, উভয় দিকের প্রশাসনের চাপের কারণে তিনি ফেসবুকের সামগ্রিক মানগুলোর সঙ্গে আপস করবেন না। নভেম্বরের নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিকভাবে তিনি নিরপেক্ষ থাকবেন।