ঢাকা: এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে টেকসই পরিবেশ তৈরি ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবুজ সল্যুশন আনতে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে গ্রামীণফোন। স্মার্ট বাংলাদেশের ডিজিটাল এনাবলার হিসেবে গ্রামীণফোন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও টাওয়ারে সোলার প্যানেল ব্যবহার বৃদ্ধিতে নিজেদের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। পাশাপাশি, গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে আলোচনায় গ্রামীণফোন সোমবার (৫ জুন) ‘গ্রিন এনার্জি ইকোসিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা করেছে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন সরকারি-বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞ ও কূটনৈতিকরা।
গ্রামীণফোন ক্রমবর্ধমানভাবে টেকসই সল্যুশনের ব্যবহার, পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে প্রচারণা এবং জ্বালানি-সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় নিরলশভাবে কাজ করছে। ২০১৯ সালের কার্বন নিঃসরণকে ভিত্তি হিসেবে ধরে প্রতিষ্ঠানটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ কার্বন নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্য নিয়েছে। গ্রামীণফোন এর কার্যক্রমে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সক্রিয়ভাবে নানা উদ্যোগ নিয়েছে; যেমন- জ্বালানি কার্যকারিতা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসে বিনিয়োগ, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে জ্বালানির সর্বোচ্চ উপযোগিতার সংস্কৃতি তৈরিতে কাজ করা এবং পরিবেশের ওপর ব্যবসায়, বিশেষ করে সাপ্লাই চেইনের প্রভাব কমাতে বিভিন্ন পর্যায়ে পার্টনারদের সাথে কাজ করা।
প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় মধ্যে নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি ব্যবহৃত হয়। তাই, গ্রামীণফোন হাতিয়ার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ২০০ টাওয়ারকে সৌরশক্তি-চালিত টাওয়ারে রূপান্তরিত করেছে এবং এর দ্বারা যেসব অঞ্চলে কানেক্টিভিটি সুবিধা নেই, সেখানে কানেক্টিভিটি সেবা নিশ্চিত করছে। এ হাইব্রিড সাইটগুলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাসের পাশাপাশি অতিরিক্ত জ্বালানি সঞ্চয় করছে- নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূরণে এটি গ্রামীণফোনের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সবুজ রূপান্তরের গুরুত্বে আলোকপাত করে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ‘জার্মানওয়াচের ২০২১ গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (সিআরআই) অনুযায়ী, আমরা দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছি এবং দুর্যোগের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সৌরশক্তি চালিত টাওয়ার স্থাপন করা সবুজ ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে অন্যতম একটি পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপ আমাদের কার্যক্রম থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশে সবুজ উদ্যোগ গ্রহণকারী অগ্রণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা বিস্তৃত পরিসরের উদ্যোগ নেয়ার মধ্য দিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমার বিশ্বাস, গ্রিডলাইন ব্যবহার করার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হলে, তা দেশে সবুজ জ্বালানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎসাহ বাড়বে; এছাড়া, আমাদের জাতীয় লক্ষ্যও অর্জিত হবে।’
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে জিপিহাউজে একটি গোল টেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে আলোচক ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার-সভেন্ডসেন, ইউআইইউর সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের ডিরেক্টর মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট নাজনীন আহমেদ, ডিট্রোলিক এনার্জি হোল্ডিংস এসডিএন বিএইচডির গ্রুপ সিইও থাম ছি অওন এবং এইচঅ্যান্ডএমের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার ফয়সাল রাব্বি।
আলোচকরা কর্পোরেট পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টের (সিপিপিএ) বর্তমান আইন, বেসরকারি খাতের ট্রান্সমিশন ব্যবহার ও অবকাঠামো বিন্যাস এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বাজারকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পক্ষের সহযোগিতার গুরুত্বসহ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত নানা বিষয়ের ওপর গঠনমূলক আলোচনা করেন।
সায়েন্টিফিক বেইজড টারগেট ইনিশিয়েটিভ (এসবিটিআই) কর্তৃক অনুমোদিত আইসিটি খাত-নির্ভর ডিকার্বোনাইজেশন পাথওয়ের ওপর নির্ভর করে গ্রামীণফোনের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে, অফগ্রিড ও অনগ্রিড পিপিএ একত্রিত করার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ কার্বণ হ্রাস করাই গ্রামীণফোনের লক্ষ্য।
বিপিডিবির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও বিক্রির কারণে বর্তমান বাজারে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে; এসব প্রতিবন্ধকতার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করা ও নীতিনির্ধারকদের জন্য পরবর্তী সুপারিশ একত্রিত করার সুযোগ করে দিয়েছে এ গোল টেবিল আলোচনা।
ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গ্রামীণফোন পরিবেশ বান্ধব ইসিম চালু করার নেতৃত্ব দেয়াসহ সম্ভাব্য সব উপায়ে পরিবেশগত প্রভাব কমাতে পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চায়। এ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়ে অনগ্রিড সিপিপিএর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে ‘গ্রিনার এনার্জি ল্যান্ডস্কেপে’ বাংলাদেশের রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে অংশীদার ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে আগ্রহী গ্রামীণফোন।