নিউইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: মনজুর আহমদ। বাংলাদেশের খ্যাতিমান প্রবীণ সাংবাদিক, কথা সাহিত্যিক। দেশ ও প্রবাসে টানা প্রায় ৬৫ বছর সাংবাদিকতা শেষে সম্প্রতি অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৮১ বছর বয়সী মনজুর আহমদ প্রায় আড়াই যুগ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসী জীবনের দশ বছর সংবাদ সম্পাদনার দায়িত্ব পালন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ ছাড়লেন।
মনজুর আহমদের অবসরগ্রহণ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেঁস্তোরায় সাংবাদিক অকবর হায়দার কিরণ ও ফটো সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী আয়োজন করেন প্রীতি সম্মিলনের। অনুষ্ঠানের আরেক মধ্যমনি ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রেখা আহমদ। ‘শ্রদ্ধেয় মনজুর আহমদ’-এর সাথে কিছুক্ষণ’ শিরোনামের এ আড্ডা অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল ইউটিউব চ্যানেল ‘কিরণ টিভি’ এবং রূপা খানম ও সিমু আফরোজা। অনুষ্ঠানে মূল উদ্দেশ্য ছিল মনজুর আহমদ ও রেখা আহমদ দম্পতির ‘অসাধারণ দাম্পত্য’ জীবনের গল্প জানা।
আড্ডায় জানা যায়, মাত্র ১২ বছর বয়স থেকে ঝিনাইদহের মেধাবী বালক মনজুর আহমদ শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা। কিছু দিন পর তার কাছে ডাকের মাধ্যমে আসে দৈনিক সংবাদদাতার নিয়োগপত্র। তারপর থেকে ঢাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি দৈনিক ‘সংবাদ’ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে ফুলটাইম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক পাকিস্তান হয়ে দৈনিক বাংলায় দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবন। পাশাপাশি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউএজ) ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের নেতৃত্ব দিয়েছেন তার বর্ণাঢ্য জীবনে।
নিউইয়র্কে আসার পর বেশ কিছুকাল কাজী শামসুল হকের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক এখন সময় ও পরবর্তী জাকারিয়া মাসুদ জিকো ও শাহ নেওয়াজের সাপ্তাহিক আজকালের সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি সাপ্তাহিক আজকালের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
অপর দিকে, রেখা আহমদ ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার মানুষ হলেও পিতার চাকুরীর সুবাদে তার জন্ম ও বড় হওয়া মনজুর আহমদের ঝিনাইদহ শহরে। কিভাবে তাদের পরিচয় ও পরিণয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনুরাগীদের প্রচন্ড আগ্রহের কারণে কিছুটা জানা গেল।
মনজুর আহমদ বললেন, ‘এ রেখা ছিল আমাদের শহরের সেরা, গুণী ছাত্রী ও সুন্দরী।’
তাদের যখন বিয়ে হয়, তখন মনজুর আহমদের বয়স ছিল ২২ আর রেখা আহমদের ছিল ১৮। বেতন ছিল মাত্র ৬০ টাকা। তাদের জীবনের গল্প যেন সমবেত সবাই অবাক হয়ে শুনছিলেন। তিনি অদ্ভুতভাবে সেই যুগ যুগ আগের ঘটনা ও স্মৃতি ঝকঝকে আয়নার মত করে শুনালেন। অনুষ্ঠানের অনেকেই মনজুর আহমদকে ‘সাংবাদিকতার এনসাইক্লোপেডিয়া’ বলে আখ্যায়িত করেন।
অনুষ্ঠানে ‘মনজুর আহমদ-রেখা আহমদ’ দম্পতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অড্ডার ফাঁকে ফাঁকে প্রবাসের জনপ্রিয় এ দম্পতি নিয়ে কথা বলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মশিউর রহমান, প্রবীণ সাংবাদিক সাঈদ তারেক, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের, শিল্পী রাগিব আহসান, বাংলাদেশ ফাইন আর্টস একাডেমির (বাপা) প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন, সাংবাদিক মনিজা রহমান, গ্লোব বাংলার সম্পাদক আবু নছর মিনার, শাহ গ্রুপের কর্ণধার শাহ জে চৌধুরী, কবি রওশন হাসান, লেখক রাজিয়া নাজমী, এইচবি রিতা, শেলী জামান খান ও ভায়লা সালিনা লিজা, শিল্পী শহীদ উদ্দিন, অভিনেত্রী প্রতিমা সুমী, সফি মাহমুদ, আহমেদ হায়দার।
অনুষ্ঠানে বক্তারা মনজুর আহমদকে নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা ও স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘তার মত বিচক্ষণ সাংবাদিক আমরা আর পাব না। অল্প পরিসরে মনজুর আহমেদ ভাই তার পথ চলার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আমাদের ঋদ্ধ করেছেন। তিনি সমুদ্রের মত জ্ঞানগর্ভ, অত্যন্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ, নির্ভীক, সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক। নিজের মেধা, মনন, পরিশ্রম ও সেবা সর্বস্ব দিয়েছেন প্রবাসের বাংলাদেশী কমিনিটি ও মানবতার জন্য। সাংবাদিকতা জগতে তিনি একজন চৌকস সাংবাদিক আর ভাল মনের মানুষ। তাকে পরিমাপ করার সামর্থ্য নেই। তিনি ইতিবাচক, সহনশীল, নম্র, বিনয়ী, শ্রদ্ধাশীল মানবিক, ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা ও সদা মিষ্টি ভাষী গুণের মানুষ। মনজুর আহমদ আমাদের হৃদয়ে আজীবন থাকবেন, সেখানে তার কোন অবসর নেই।’
বক্তারা মনজুর আহমদ ও রেখা আহমদ দম্পতির সুস্থ্যত্য আর দীর্ঘায়ু প্রত্যাশা করেন।