রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম সিটিতে জলাবদ্ধতা; প্রস্তুত ২৩৯ আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৯০ মেডিকেল টিম

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২২, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম: টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম সিটিতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, জেলার সীতাকুন্ড, মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। এসব উপজেলার ৩১টি ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় এরইমধ্যে ২৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

অতি ভারী বৃষ্টিতে সিটির নিউমার্কেট, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, মুরাদপুর, শুলকবহর, দুই নম্বর গেট, বাকলিয়া ও আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার কোন কোন সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. ফাহমুন নবী জানান, বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিমধ্যে ৫০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ফটিকছড়িতে ২০ টন, মিরসরাইয়ে ২০ টন ও সীতাকুন্ডে দশ টন ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, ২৩৯ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৭২৫ জন লোক আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। আশ্রিত লোকজনের মধ্যে ৬১৭ পুরুষ, ৬২০ নারী, ৪৬৩ শিশু ও ২৫ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন।

চট্টগ্রামে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল নয়টা পর্যন্ত গেল ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৪১ দশমিক আট মিলিমিটার। এছাড়া বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল ছয়টা থেকে নয়টার মধ্যে তিন ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

এ দিকে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের ছয় বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের সই করা বার্তায় জানানো হয়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল দশটা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানান. অতি বর্ষণের কারণে নগরসহ উপজেলাগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় কিছু কিছু এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধসহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই, চট্টগ্রাম জেলার ২০০ ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে একটি করে মোট ২০০টি, ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রত্যেকটিতে পাঁচটি করে মোট ৭৫টি, নয়টি আরবান ডিসপেন্সারির প্রত্যেকটিতে একটি করে মোট নয়টি, একটি স্কুল হেলথ ক্লিনিকে একটি ও জেলা সদর হাসপাতালে (চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল) পাঁচটি মেডিকেল টিমসহ সর্বমোট ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বাফার স্টক (ওষুধ, স্যালাইন, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি) মজুদ রাখতে হবে। সম্ভাব্য যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ইউএইচ এন্ড এফপিওসহ সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। সাপে কাটা রোগীর জন্য এন্টিভেনম মজুদ রাখতে হবে। অতি বৃষ্টির কারণে যেন জনগণের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত না হয়; সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বৃষ্টির পানিতে সরকারি মালামাল যাতে নষ্ট না হয়, সে ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। যে কোন বিষয়ে অবগত-পরামর্শেও জন্য জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের নম্বর-০২৩৩৩৩৫৪৮৪৩ সার্বক্ষণিক চালু থাকবে। সম্ভাব্য যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।