রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ট্রাম্পকে বিশ্বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা!

বুধবার, জানুয়ারী ৩১, ২০২৪

প্রিন্ট করুন
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়েছে বেশ পূর্বেই। ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী ঠিক হয়েই আছে। বয়স ৮১ হলেও ফের প্রেসিডেন্ট হতে চান জো বাইডেন। তবে, বাইডেনকে ক্ষমতা থেকে নামাতে আটঘাট বেধে নেমেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গেল বার ডেমোক্র্যাট বাইডেনের কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে যান রিপাবলিকান ট্রাম্প। তবে, তিনি মনে করেন, নির্বাচনে তিনিই জিতেছিলেন; তাকে কারচুপি ও ষড়যন্ত্র করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হুমকির মুখে। ডেমোক্র্যাটরা দেশ ধ্বংস করে ফেলছেন। তিনি দেশকে উদ্ধার করতে চান। যুক্তরাষ্ট্রকে ফের ‘শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও মহান’ করতে চান। যার প্রচারণার প্রধান স্লোগানই হল ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। যুক্তরাষ্ট্রের বহু নাগরিক ফের তার এসব বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতি বিশ্বাসও করছেন।

মনোনয়ন দৌড়ে ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান দল। এখন প্রধান বিরোধী দল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য এখনও দলটির প্রার্থী নিশ্চিত হয়নি। প্রার্থী বাছাইয়ে প্রাথমিক ভোটাভুটি কেবল শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে আইওয়া ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার দুটিতেই ভূমিধস জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের পাশাপাশি আরও প্রায় দুই ডজন প্রতিযোগী রিপাবলিকান পার্টির এবারের মনোনয়ন দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস, সাউথ ক্যারোলাইনার সাবেক গভর্নর নিকি হ্যালি, ব্যবসায় উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামী, সাবেক আরকানসাস গভর্নর আসা হাচিংসন ও আরেক ব্যবসায়ী রায়ান বিঙ্কলে।

এর মধ্যে অনেকেই প্রাথমিক ভোটাভুটি (প্রেসিডেন্সিয়াল) শুরু হওয়ার বেশ পূর্বেই রণেভঙ্গ দেন। আইওয়া ককাসে অংশ নেন মাত্র সাতজন। এর মধ্যে ট্রাম্পের জয়ের পর বিবেক রামাস্বামীসহ চারজন বিদায় নেন। ফলে, নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতে প্রার্থী সংখ্যা কমে দাঁড়ায় তিনজনে। তারা হলেন- ট্রাম্প, নিকি হ্যালি ও রন ডিস্যান্টিস।

গেল সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ওই ভোটে বড় জয় পান ট্রাম্প। এরপরই বিদায় নেয়ার ঘোষণা দেন তৃতীয় অবস্থানে থাকা রন ডিস্যান্টিস। ট্রাম্পের এখন একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালি।

‘গ্রানাইট রাজ্য’ খ্যাত নিউ হ্যাম্পশায়ারে ট্রাম্পকে হারানোর লক্ষ্যে তিন কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ নারী রাজনীতিক। এরপরও শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের কাছে হারতে হয়েছে। কিন্তু, সহজেই পরাজয় মানছেন না নিকি, চান শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে।

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি নিকির নিজের রাজ্য সাউথ ক্যারোলাইনায় ভোটাভুটি। যে রাজ্যে দীর্ঘ দিন গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অন্তত সাউথ ক্যারোলাইনা তাকে বিমুখ করবে না- এমন আশায় বুক বাধছেন নিকি।

কিন্তু ‘নিজের বাড়ি’ হলেও এ রাজ্যে ‘অরেঞ্জম্যান’ খ্যাত ট্রাম্পকে হারাতে হলে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকিকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞজনরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ‘গেল কয়েক বছরে প্রতিপক্ষের নিরবচ্ছিন্ন ও নজিরবিহীন আক্রমণ ও নানা প্রতিকূলতার মুখেও ট্রাম্প নিজেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন।’

এছাড়া, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে তিনি যেসব রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন, তা ‘অনঢ় ও অটল’ বলে প্রমাণিত হয়েছে। যদি অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পই রিপাবলিকান প্রার্থী মনোনীত হবেন।

কাজে আসেনি ক্ষমতাসীনদের মামলা ও ষড়যন্ত্র: ক্ষমতা ছাড়ার পরপরই ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। কিন্তু, তাকে ঠেকাতে ধারাবাহিকভাবে বাক্যবাণ, মামলা ও ষড়যন্ত্র করে চলেছে ক্ষমতাসীনরা। অন্তত ট্রাম্প তেমনটাই দাবি করেন। গেল তিন বছরে তার বিরুদ্ধে ৯১টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবশেষ ধর্ষণের মামলায় তাকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়। কিন্তু, পাহাড়সম বাধার মুখেও এক দিকে যেমন নিজ দলের বেশিরভাগ কর্মী-সমর্থকের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন, অন্য দিকে বিরোধীদেরকেও কোণঠাসা করতে পেরেছেন ট্রাম্প। এক্ষেত্রে, নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত অনুগত এক দল কর্মী ও সমর্থককে সব সময় পাশে পেয়েছেন ট্রাম্প। যারা তার জন্য জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত। যার দৃষ্টান্ত ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল দখল। যেটাকে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা ‘গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে।

তবে, ট্রাম্পের অনুগত কর্মী-সমর্থকরা মনে করে, ৬ জানুয়ারির ঘটনাকে ঘিরে ডেমোক্র্যাটরা বরাবরই একটা ‘হাইপ’ তোলার চেষ্টা করে আসছে। তারা আরও মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনরা মূলত একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে কোণঠাসা করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নজিরবিহীন হস্তক্ষেপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।

প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পই প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যাকে ক্ষমতা ছাড়ার পর ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং বহু রিপাবলিকানই এটাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন না। তবে, ডেমোক্র্যাটরা বহু দেরিতে হলেও যেটা বুঝেছে তা হল, তাদের এসব বাক্যবাণ ও মামলা তাদের প্রতিপক্ষকে আরও শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।

ট্রাম্পকে বিশ্বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা: ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানের অনুসারীদের জন্য ২০২৪ সাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা তাদের জন্য শুধু ভোটকেন্দ্রে ফিরে যাওয়ার বছর নয়, ‘দেশ বাঁচানো’র সব শেষ সুযোগও। আর তাই তারা এই সুযোগকে হেলায় হারাতে চায় না। এক্ষেত্রে, ট্রাম্পকেই রীতিমত অবতার মানছেন তারা। তাদের চাওয়া, বর্তমান পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন ও বৈশ্বিক মঞ্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেকে আরও গুটিয়ে নেয়া।