ঢাকা: বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) পাশাপাশি জাপানী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
সিঙ্গারের মত একটি স্বনামধন্য বহুজাতিক কোম্পানি ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেছে ও জার্মান কোম্পানি রুডলফের সাথেও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম উদ্বোধনের দিনে আরো দুইটি জাপানী বিনিয়োগকারীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এছাড়া আরো ৩০টি জাপানি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দেশের আরো দশটি প্রতিষ্ঠান এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) আগারগাঁও এলাকায় বেজা কার্যালয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের (ডিজেএফবি) সদস্যদের সাথে মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এসব তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারো কাওয়াচি, ডিজেএফবি সভাপতি হামিদ উজ জামান, ডিজেএফবি সদস্যবৃন্দ ও বেজার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হারুন জানান, জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে চালু হয়ে গেলে শিগগিরই আরো কয়েকটি কোম্পানির সাথে চুক্তি সই করা সম্ভব হবে। তাহলে এ জোনে দেড় বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি এক লাখেরও বেশি লোকের প্রাথমিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে হারুন জানান, সিঙ্গার প্রাথমিক বিনিয়োগ করবে ৭৯ মিলিয়ন ডলার ও রাসায়নিক কোম্পানি রুডলফ ৭ মিলিয়ন ডলার প্রাথমিক বিনিয়োগ করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘রেড ক্যাটাগরি’র অধীনে কোন শিল্প বা সংস্থাকে কোন অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের শিল্প স্থাপনের অনুমতি দেয়া হবে না ও প্রতিটি শিল্পকে ইটিপি স্থাপন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি কেন্দ্রীয় ইটিপি স্থাপন করবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চল-২ স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শেষ হয়েছে।’
তিনি জানান, এছাড়াও, চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য আরেকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে হারুন বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও মহামারী কাটিয়ে ওঠার জন্য দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, দেশ বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে ও মহামারীর ধাক্কা সত্ত্বেও বিনিয়োগ পরিস্থিতি এখন ভাল অবস্থায় রয়েছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শিগগিরই এলএনজি আমদানি পুনরায় চালুর বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার বেসরকারি খাতের মাধ্যমে এলএনজি আমদানির অনুমতি দেয়ার সম্ভাবনা যাচাই করছে।’
তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকার জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিকে (জাইকা) অনুরোধ জানিয়েছে।
হারুন বলেন, ‘জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি আলাদা ওএসএস সেন্টার ও একটি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির পর বেজা ও জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন এখানে জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চলটি স্থাপন করছে।’
হারুন জানান, দেশব্যাপী পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭৭টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আট লাখ ১৬ হাজার ৫৪১ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২২ হাজার ১৭৩ দশমিক ১৭৭ মিলিয়ন ডলারের সামগ্রিক বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। এ পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হল- মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (বিএসএমএসএন), জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ (ধলঘাটা) ও শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল।
এছাড়া বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।