নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও রাজনৈতিক অভিযাত্রা চিত্রিত করে ভারতের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগালের নির্মিত বায়োপিক চলচ্চিত্র ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। কোন ধরনের সাড়া শব্দ ছাড়াই গেল উইকএন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রিলিজ হয়েছিল চলচ্চিত্রটি। চলচ্চিত্রটি রিলিজের আগে কোন ধরনের প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। ফলে, চলচ্চিত্রটি দেখতে আশানুরূপ দর্শক আসেনি প্রেক্ষাগ্রহে।
বর্তমানে কুইন্সের থিয়েটার জ্যামাইকা সিনেপ্লেক্সে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ মুক্তি পেয়েছে অনেকটা নিরবেই। এখানেও নেই কোন প্রচার-প্রচারণা, করা হয়নি সংবাদ সম্মেলন। অথচ এই সময়ের বহুল প্রতিক্ষীত চলচ্চিত্র ছিল এটি। লোকমুখে শুনে কিছু আগ্রহী বাঙালি ছুটে যাচ্ছেন চলচ্চিত্রটি দেখতে। কিন্তু, সিনেপ্লেক্সের থিয়েটারে নেই ভিড়। প্রচার-প্রচারণা ছাড়া এমন একটি চলচ্চিত্র যুক্তরাষ্ট্রে রিলিজ করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল এ পর্যন্ত নির্মাতা হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। যদি প্রচার-প্রচারণাসহ আনুষ্ঠানিকভাবে এই চলচ্চিত্র রিলিজ দেয়া হত, তাহলে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী চলচ্চিত্রটি দেখার সুযোগ পেত।’
নিউইয়র্কে ও এর কাজের রাজ্যগুলোতে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী বাস করেন। কেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্ব দিল না, তা এখন বিরাট প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।
নিউইয়র্কের মাত্র নয়টি প্রেক্ষাগ্রহে চলচ্চিত্রটি রিলিজ দেয়া হয়েছিল। প্রচারণ-প্রচারণা না থাকায় এগুলোতে এক সপ্তাহের বেশি চলেনি চলচ্চিত্রটি। এতে অনেকের মনেই প্রশ্ন, কারা এমন যেনতেনভাবে এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি দিল? কেনই বা দিল। কারা এভাবে চলচ্চিত্রটি নিউইয়র্কে রিলিজ করল। গণ মাধ্যমগুলোর অনুসন্ধান জানা গেল, কেউই এ ব্যাপারে জানেন না। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি গেল সপ্তাহে নিউইয়র্কের বাইরে ছিলেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউজ ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে র্যালি করে চলে যান ফ্লোরিডায়। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ব্যাপারটি জেনে বিস্মিত হন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিটু আনাম নামে একজন লিখেছেন, ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার কোন প্রকার প্রচার ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কে বা কারা এবং কেন এটা করল, কিছুই বুঝলাম না।’
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা চলচ্চিত্রের একমাত্র পরিবেশক ও প্রমোটার বায়োস্কোপ মুভির সহকর্ণধার নওশাবা রশীদ রুবনা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ নিউইয়র্কে রিলিজ দেয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে নিউইয়র্কে মুক্তি দেয়ার কথাবার্তা যখন চলছিল, তখনই দেখা গেল জ্যামাইকা সিনেপ্লেক্সে চলচ্চিত্রটি চুপচাপ প্রদর্শিত হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি, চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য দর্শকের ভীড় নেই।’
বায়োস্কোপের দুই স্বত্বাধিকারী রাজ হামিদ ও নওশাবা রশীদ যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে বসবাস করেন। নিউইয়র্কে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন শহরের চেয়ে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশীর বাস, তাই বাংলা চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও প্রচার-প্রচারণার প্রধান স্পট হিসাবে তারা বেছে নেন নিউইয়র্ক। এখানে বাংলাদেশী মালিকানাধীন সংবাদপত্র ও সামাজক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া ছাড়াও সব চলচ্চিত্র রিলিজের আগে সংবাদ সম্মেনের মাধ্যমে ঘটা করে ঘোষণা দেয়া। সেই সাথে চলচ্চিত্রের মূল অভিনেতা-অভিনেত্রী ও পরিচালককে এনে আকর্ষণ বৃদ্ধি করেন। কিন্তু, ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ রিলিজ উপলক্ষে এসবের কিছুই করা হয়নি।
নওশাবা রশীদ জানান, ভারতের একটি বিখ্যাত পরিবেশক এই চলচ্চিত্রটি নিউইয়র্কে মুক্তি দিয়েছে।
এখনো নিশ্চিত নয়, এক সপ্তাহের বেশি এই চলচ্চিত্রটি জ্যামাইকা সিনেপ্লেক্সে চলবে কিনা।
নওশাবা রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘কোন চলচ্চিত্র দেখতে যদি আশানুরূপ দর্শক পেক্ষাগ্রহে আসে, তখন তা পরবর্তী সপ্তাহেও চালানো হয়। কিন্তু, এই চলচ্চিত্রটি পরের সপ্তাহে চালানো না চালানো নির্ভর করছে পরিবেশকের ওপর।’
বলে রাখা ভাল, ‘বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ বাংলাদেশে গেল ১৩ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল।