নিউইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর নিউইয়র্কে কনজ্যুমার ডাইরেক্টেড পারসোনাল প্রোগ্রাম (সিডিপ্যাপ) ও হোম কেয়ার সেবার ওপর কোনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রথম হোম কেয়ার বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা আবু জাফর মাহমুদ।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) নিউইয়র্কে জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর কাচারি ঘরে আয়োজিত প্রতিবেশি সমাবেশে তিনি এ কথা জানান।
সমাবেশে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ‘ইদানিং বিভিন্ন পত্রিকা সংবাদ দিচ্ছে সিডিপ্যাপ ঝুকিঁতে পড়বে। এ ধরনের সংবাদের সত্যতা নেই।’
মিডিয়া যতটুকু শোনে, সে অনুযায়ী সংবাদ দেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘গভর্নর ক্যাথি হোকুল একটি বিশেষ গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতার অংশ হিসেবে সাধারণ নিউইয়র্কবাসীকে হোম কেয়ার সেবা বঞ্চিত করার পাঁয়তারাঁ করছে- এমনকি এথনিক কমিউনিটিকে লাইসেন্সের শেয়ারও দেয়া হয়নি।’
তিনি এথনিক কমিউনিটির সঙ্গে বৈষম্যমূলক এ আচরণের তীব্র সমালেচনা করে বলেন, ‘এসব কারণে বহু আগ থেকে এটর্নীর মাধ্যমে আমাদের মামলা চলছে। ৬৭টি বৃহৎ আকারের হোম কেয়ারকে সঙ্গে নিয়ে আরো একটি মামলা করা হয়েছে।’
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ‘নিউইয়র্কে সিডিপ্যাপ ঝুকিঁর মুখে রয়েছে- এমন প্রচারণায় সেবাগ্রহীতাদের বিভ্রান্ত হওয়ার দরকার নেই। নিশ্চিন্ত মনে হোম কেয়ার সেবা নিতে পারবেন নিউইয়র্কবাসী।’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরবর্তী ইমিগ্রেশন ইস্যুতেও চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই জানিয়ে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশি অভিবাসীদের সর্তক হতে হবে। তবে, কোন অপ-প্রচারে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। ভারতীয় ৪৩ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এতে কোন বাংলাদেশি নেই।’
আবু জাফর মাহমুদ জ্যামাইকা হিলসাইড অফিসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘এটি আমাদের ‘কাচারি ঘর’। এখানে আপনারা যে কোন অনুষ্ঠান করবেন। নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন। এখানে বাণিজ্যের কোন সম্পর্ক নেই। এখানে সপ্তাহে সাতদিন অবিরাম সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল রয়েছে। ঘরে ঘরে গিয়ে বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের দায়িত্বশীলরা তাদের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তারা আপনাদের খোঁজ রাখছে। সব সময় পাশে আছে।’
প্রতিবেশী সমাবেশটি কার্যত পরিণত হয় বাংলাদেশীদের মিলন মেলায়। আট শতাধিক বাংলাদেশির উপস্থিতিতে শীতার্ত সন্ধ্যায় ছড়িয়ে পড়ে উষ্ণতা। জয় বাংলাদেশ মিডিয়ার আদিত্য শাহীনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের সেবা কার্যক্রম বিষয়ে প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। আয়োজনে বক্তব্য দেন ডেমোক্রেটিক স্টেট কমিটির জেনি কাজী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সাপ্তাহিক পরিচয়ের সম্পাদক নাজমুল আহসান, নিউইয়র্ক কাগজের সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম।
জেনি কাজী বলেন, ‘হিলসাইড এভিনিউতে দিনকে দিন বাংলাদেশি কমিউনিটির সংখ্যা বাড়ছে । এখানে ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে চোখে পড়ার মতে। কমিউনিটির স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে আবু জাফর মাহমুদের ‘কাচারিঘর’ নি:সন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে, যেমনটা রাখছে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসসহ অন্যান্য বাংলাদেশি কমিউনিটি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোত।’
তিনি আরো বলেন, ‘সবে যুক্তরাষ্ট্রে নিবার্চন শেষ হল, আমরা নতুন প্রেসিডেন্ট পেয়েছি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে । এরই মধ্যে আমাদের কমিউনিটির ওপর আঘাত আসা শুরু করেছে। এ কারণে আমাদের আরো বেশি সুসংহতভাবে একত্রে কাজ করতে হবে।’
নাজমুল আহসান বলেন, ‘আমাদের কমিউনিটিতে ব্যবসায় করে অনেকে কোটিপতি হয়েছে, বাড়ি ঘর বানিয়েছে। কিন্তু, তাদের মধ্যে মানুষকে মনে রাখার যে চেষ্টা বা কমিউনিটির মানোন্নয়ে যে চেষ্টা, সেটি খুব কম সফল মানুষের মধ্যে দেখা যায়। আবু জাফর মাহমুদ সেই মনে রাখার কাজটি নিরলসভাবে করে চলেছেন। কাচারিঘর নিউইয়র্কে একমাত্র তারই আবিস্কার।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ হোম কেয়ারের জন্য বাংলাদেশি কমিউনিটি তাদের বাবা-মায়ের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এক সময় আমরা বাবা-মা, শশুর শাশুড়ির জন্য ইমিগ্রেশনে আবেদন করতে ইচ্ছুক হতাম না অথচ বাংলাদেশিরা এখন মেডিকেড সেবার জন্য অস্থির, ট্রাম্পের আসার কারণে তারা যে চিন্তিত, নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির এ চিন্তা দূর করার প্রথম উদ্যোগ নিয়েছেন আবু জাফর মাহমুদ। হোম কেয়ারের জন্য বহু প্রবাসী বাংলাদেশির ঘরে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।’
মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আবু জাফর বাংলাদেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরও জীবনযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। নিউইয়র্কে তিনি হোম কেয়ারের প্রবক্তা। এ ব্যবসায় করে নিউইয়র্ক শহরে কমপক্ষে এক ডজন কোটিপতি হয়েছেন। কিন্তু, আবু জাফর মাহমুদ বরাবরাই বাংলাদেশিদের জন্য নিজের সবটা বিলিয়ে দিয়েছেন।’