রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও করে না

সোমবার, জুলাই ১৫, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দেয়াকে অত্যন্ত দুঃখজনক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও লাগে না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী কীভাবে দেশে অত্যাচার চালিয়েছে, তা তারা জানে না। এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই, নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাবোধ হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর’ এবং ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি’ ও ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

২০১৪-১৫ অর্থ বছর থেকে সরকারি কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি প্রবর্তন করা হয়েছে।

এতে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা, তাদের এ অবদান ভুললে চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে। পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকার বাহিনী যেভাবে এদেশে অত্যাচার করেছে, সেখানে আমার খুব দুঃখ লাগে গতকাল রোববার যখন শুনি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে তারা রাজাকার।’

তিনি বলেন, ‘তারা কী জানে ’৭১ সালের ২৫ মার্চ কি ঘটেছিল সেখানে। সেখানে ৩০০ মেয়েকে খুন করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা। ৪০ জন মেয়েকে পাকিস্তানি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছিল। তারা সেখানে কী অবস্থায় ছিল? বহু মেয়ে শাড়ি বা ওড়না দিয়ে ফাঁসি দিয়েছিল তাদের কাপড় পড়তে দেয়া হত না। একটা পেটিকোট পরিয়ে বসিয়ে রাখত। দিনের পর দিন তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতো।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘যখন তাদেরকে উদ্ধার করা হয়, মিত্র শক্তির এক ভারতীয় শিখ সৈন্য নিজের মাথার পাগড়ি খুলে এক মেয়ের গায়ে পরিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এটা কেবল একটা ঘটনা, এ রকম অনেক ঘটনা রয়েছে।’

শেখ হাসিনা মুক্তিযদ্ধে নারীদের অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বসে থাকত না। তারাও কিন্তু কাজ করত। পিরোজপুরে এক মেয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর রান্নার কাজ করত এবং রাতে নদী সাঁতরে পার হয়ে চিতলমারী গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে হানাদারদের সংবাদ পৌঁছে দিত। ধরা পড়ার পরে দুইটা গাড়ির সাথে তার দুই পা বেঁধে টেনে হিঁচড়ে খন্ড বিখন্ড করে ফেলা হয়। এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই, নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে। এখানে কেউ শান্তি কমিটিতে ছিল। কিন্তু, মানুষের ক্ষতি করেনি। কিন্তু যে বাহিনীগুলো তারা (পাকিস্তানী হানাদাররা) তৈরি করেছিল, তাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল ও তাদেরকে দিয়ে মানুষের ক্ষতি করত; অত্যাচার, লুটপাট ও গণহত্যা চালাত। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, তাদের বিচার করে অনেকের ফাঁসিও দিয়েছি। এর মাধ্যমে তাদের দ্বারা যারা নির্যাতিত তারা ন্যায় বিচার পেয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের। জাতির পিতার একটি ডাকে এ দেশের মানুষ ঘর-বাড়ি পরিবার-পরিজন সবকিছু ছেড়ে দিয়ে রণক্ষেত্রে চলে গেছে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে। আর যারা ঐ বাহিনীতে ছিল (রাজাকার-আলবদর-আলশামস) এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। সেটাতো ভুলে গেলে চলবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সেই শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। তাহলেই এদেশ এগিয়ে যাবে ও সেটা যে বাস্তবতা তার প্রমাণ ১৯৭৫ সালের পর যারা ক্ষমতায় ছিল ২১ বছর ও পরে আরো প্রায় নয় বছর তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি ও আমরা ভুক্তভোগীরা যখন ক্ষমতায় এসেছি মাত্র ১৫ বছরে আজ বদলে গেছে বাংলাদেশ। বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশ। সেই দরদটুকু থাকতে হবে। যাই হোক এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘তার প্রথম বার সরকার গঠনের পর থেকেই লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ‘৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে খুনের পর যে মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হয়ে যায়, তাকে ফের স্বগৌরবে ফিরিয়ে আনা। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আর দেশকে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে আসা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানের ২১’-এর দুই অনুচ্ছেদের আলোকে আমরা সেবামূখি জনপ্রসাশন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি আওয়ামী লীগ সরকারই নেয়। কারণ, প্রশাসনের ওপর থেকে নিন্ম স্তর পর্যন্ত যদি একটা জবাবদিহিতা না থাকে, কীভাবে কার্য সম্পাদন বাস্তবায়ন হবে, সে সম্পর্কে যদি ব্যবস্থা না নেই, তাহলে সব কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। তাই, দ্বিতীয় বার সরকারের আসার পর এই পদ্ধতি নেই ও ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে চালু করি। আর এরই ধারাবাহিকতায় আজকে ১১তম বারের মত ২০২৪-২৫ সালের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হল।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব সম্পাদনকৃত এপিএ একে একে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে এপিএ বাস্তবায়নে সাফল্য প্রদর্শনের স্বীকৃতি স্বরুপ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দশটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পুরস্কৃত করেন। সার্বিক মূল্যায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ শীর্ষ স্থান লাভ করে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রবর্তিত শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২৩-২৪ লাভ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। এপিএ কর্মসম্পাদন ব্যবস্থানায় শীর্ষস্থান অর্জনকারি বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান এবং শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভকারি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।