সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

নির্বাচনী বিতর্কে একে অন্যকে ঘায়েল করার প্রাণপণ চেষ্টা বাইডেন-ট্রাম্পের

শুক্রবার, জুন ২৮, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

আটলান্টা, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের টেলিভিশন বিতর্ক একে অন্যকে লক্ষ্য করে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ করেছেন দুই প্রধান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চার বছরের মধ্যে এ প্রথম তারা আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে একে অন্যের মুখোমুখি হলেন। সংবাদ বিবিসির।

পররাষ্ট্র নীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা ও গর্ভপাতসহ নানা ইস্যুতে কথা বলার সময় তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন ও পরস্পরকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্র নীতির রেকর্ড ও ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসীর ব্যাপারে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন। অন্য দিকে, আদালতে সম্প্রতি ট্রাম্পের সাজার প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্পকে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন।

বিতর্কে ট্রাম্প এ বলে শেষ করেন যে ‘যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এখন জাহান্নামে বাস করছে। সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা জাহান্নামে বাস করছি।’

অন্য দিকে, শেষ বক্তব্যে বাইডেন মার্কিনীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন যে, তিনি কর কমিয়ে আনতে চান। একই সঙ্গে দাবি করেন, ‘ট্রাম্প কর বাড়িয়ে দিবেন।’

জো বাইডেন পর্ণ তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারটি তুলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন। এর পূর্বে, ট্রাম্প সম্প্রতি জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বন্দুক আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারটি তুলেছিলেন।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত ডেমোক্র্যাট দলের বাইডেন ও রিপাবলিকান ট্রাম্প পরস্পরের মুখোমুখি হলেন। বিতর্কে কথা বলার সময় বাইডেনের কণ্ঠ খসখসে শোনাচ্ছিল। এ নিয়ে তার প্রচার দল বলেছে, গেল কয়েক দিন ধরে তার ঠাণ্ডা লাগার কারণে কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে।

কে জিতেছে বিতর্কে: যুক্তরাষ্ট্রের বিবিসির স্পেশাল করেসপন্ডেন্ড কেইটিকে লিখেছেন, এবারের বিতর্কের ফরম্যাট ছিল মার্কিনীদের জন্য তুলনামূলক ভাল। তবে, সঞ্চালকরা তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করেননি ও এটা ছিল জো বাইডেনের জন্য একটি খারাপ রাত।

তার বহু উত্তরই পরিষ্কার ছিল না। তাকে বয়স্ক মনে হচ্ছিল। তবে, বিতর্কের দ্বিতীয় ধাপ তার জন্য কিছুটা ভাল ছিল ও তিনি কিছুটা শক্তি পেয়েছিলেন। তবে, এটা হতে বহুদেরি হয়ে গিয়েছিল।

বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন। কিন্তু, এটা কী তাকে নির্বাচনে জিততে সহায়তা করবে?

পর্যবেক্ষকরা কী বলছেন: রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের যারা মনোযোগ দিয়ে বিতর্ক দেখেছেন, তারা অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। প্রাক্তন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান স্টেফাইন মারফি বলেন, ‘কিছু মূহূর্ত ছিল যেখানে বাইডেন তার বয়স তুলে ধরেছেন। তাকে বোঝাটা কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু, অন্য দিকে তার মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু মন্তব্য করেছেন; যা সত্যি নয় ও এগুলো সত্যতা যাচাই করা উচিত।’ তিনি আরো বলেন, ‘তার উদ্বেগের জায়গা হল, নির্বাচনের ফল গ্রহণ করবেন কি-না তা বলতে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনীহা দেখিয়েছেন।’ প্রাক্তন রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান রোডনি ডেভিস বলেন, ‘বিতর্কটি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিষ্কার জয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডেমোক্র্যাটদের জন্য দুঃখজনক যে, বিতর্কের ধরণটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সহায়তা করেছে।’ বিবিসির ম্যাডেলাইন হ্যালপার্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর কোরউইন স্মিডট বলেন, ‘বাইডেন তার বহু দুর্বলতা দেখিয়েছেন ও খুব বেশি শক্তির জায়গা দেখাননি। ভিজুয়াল, কণ্ঠ ও উত্তর দেয়ার গতির কারণে তাকে অনুসরণ করাটা কঠিন ছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘বহু তথ্যভিত্তিক উত্তর ও পয়েন্ট প্রেসিডেন্ট বাইডেন দিয়েছেন। কিন্তু, বলার ধরনের কারণে সেগুলো দ্রুত হারিয়ে গেছে।’ কোরউইন স্মিডট বলেন, ‘ট্রাম্পের পারফরমেন্স থেকেও অনেকে বেশি শক্তির জায়গা পাওয়া যায়নি ও তিনিও কিছু দুর্বলতার দেখিয়েছেন।’ স্মিডট বলেন, ‘প্রশ্নের উত্তরে তার উত্তরগুলো দৃঢ় ছিল না। কিন্তু, উত্তরগুলো তার ভোটারদের কিছু উদ্বেগ ও ইস্যুকে স্পর্শ করে গেছে। তার সমর্থকরা তাকে চার বছর পূর্বের প্রার্থীর মতই দেখতে চায়।’

ট্রাম্প নির্বাচনের ফল মানবেন?- বিতর্ক পরিচালনাকারী সিএনএনের সঞ্চালক ট্রাম্পের কাছে দুই বার জানতে চান যে, নির্বাচনে যেই জিতুক তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনের ফল মানবেন কি-না। ট্রাম্প্র বার বার প্রশ্নটি উপেক্ষা করছিলেন বরং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে চলে যাচ্ছিলেন। এরপর ফের তাকে প্রশ্নটি করা হয়। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি এটি সুষ্ঠু, আইনগত ও ভাল নির্বাচন হয় তাহলে অবশ্যই।’ একই সঙ্গে তিনি ২০২০ সালের নির্বাচন নিয়ে তার বড় ধরনের কারচুপির অপ্রমাণিত দাবির পুনরাবৃত্তি করেন।

প্রার্থীদের বয়স প্রসঙ্গ: বাইডেনকে তার বয়স সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় যে, তিনি যখন দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করবেন, তখন তার বয়স হবে ৮৬। তিনি হবে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। উত্তর বাইডেন বলেন, ‘এক সময় তিনি সবচেয়ে কম বয়সী আইন প্রণেতা বলে সমালোচনার শিকার হতেন এবং ট্রাম্প তিন বছরের ছোট ও অনেকটাই কম যোগ্য।’ বাইডেন বলেন, ‘রেকর্ড দেখুন। দেখুন, তিনি যে ভয়ানক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছিলেন সেখান থেকে কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি।’ অন্য দিকে, ট্রাম্পকে বলা হয় যে, তার বয়স এখন ৭৮ ও দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তা হবে ৮২ বছর। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘তার স্বাস্থ্য ভাল ও তিনি এ সময় গলফ খেলার প্রসঙ্গও টেনে আনেন।’ ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি এটা করেন না। তিনি ৫০ গজ দূরেও বল পাঠাতে পারেন না। আমার মনে হয়, আমি ২৫-৩০ বছর পূর্বের মতই ভাল অবস্থায় আছি। সত্যি বলতে, আমি এখন আরো উজ্জ্বল।’

শিশু যত্নের ব্যয় প্রসঙ্গ: শিশু যত্নের ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা নিয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ব্যয় কমিয়ে আনতে তিনি কী করবেন। উত্তরে বলতে গিয়ে ট্রাম্প যথারীতি যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত ইস্যু টেনে এনে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন। উত্তরে পাল্টা আক্রমণ করে বাইডেন বলেন, ‘ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট।’ এরপর তিনি বলেন, ‘শিশু যত্নের ব্যয় কমাতে ট্রাম্প খুব কম ব্যবস্থাই নিয়েছিলেন।, পরে ট্রাম্প তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে কী করেছেন, সেটি তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, ‘তারা আমাকে সবচেয়ে ভাল মনে করে ও আমি যদি আরো চার বছর পাই, তাহলে আমি আমার সেরাটাই দিব।’

বীরেরা রাস্তায় বাস করছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি জো বাইডেনের মত আর কাউকে ‘এত মিথ্যা’ বলতে দেখেননি এবং ভেটেরান অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রেওর সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেন বাইডেনের। তিনি বলেন, ‘তিনি (বাইডেন) যাই বলছেন, সব মিথ্যে।’ এ পর্বেও ট্রাম্প সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়ার অভিযোগ করেন বাইডেনের বিরুদ্ধে ও বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষ পাবলিক পেনশন স্কিমে যোগ হতে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট ও আমাদের ভেটেরানদের সঙ্গে যা করেছে, তা অবিশ্বাস্য। আমাদের বীরেরা এখন রাস্তায় বাস করে। আর এসব লোকেরা (অভিবাসী) থাকে বিলাসবহুল হোটেলে।’