আল মামুন রিটন: মানব সভ্যতার ইতিহাসে ধর্মীয় পবিত্র গ্রন্থগুলো সামাজিক বিধান ও নীতিকে স্থায়িত্ব দিয়েছে। যেসব ধর্মে এ ধরনের গ্রন্থ ছিল, তারা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে। এই প্রতিরোধের শক্তি নির্ভর করেছে গ্রন্থগুলোর ব্যাখ্যার স্পষ্টতা ও সমাজে সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতার ওপর।
অন্যদিকে, ভাষা ও সাহিত্য বরাবরই পরিবর্তনশীল। শেক্সপিয়রের ‘টেম্পেস্ট’ (১৬১১) থেকে মেরি শেলির ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ (১৮১৮) ও জেন অস্টেনের ‘পারসুয়েশন’ পর্যন্ত সময়কালে ইংরেজি ভাষায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এর কারণ ব্যাকরণ ও অভিধানের মানকরণ, যা ভাষাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন রোধ করতে পারেনি। ভাষার পরিবর্তন নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টার বাইরে থেকেও প্রবাহমান থেকেছে।
শিল্প ও প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানকরণ ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অ্যাকাউন্টিং, স্থাপত্য, প্রকৌশল কিংবা সফ্টওয়্যার উন্নয়নে মান নির্ধারণের ফলে কার্যকর ও সুসংগঠিত ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এসব ক্ষেত্রের নিয়ম ও কাঠামো দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। কারণ সেগুলো নির্ভুলতা ও কার্যকারিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
কিন্তু সংস্কৃতির ক্ষেত্রে চিত্রটা ভিন্ন। গত কয়েক শতাব্দী ধরে আমাদের সমাজ ইচ্ছাকৃতভাবেই পুরনো নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্বীকার করেছে। ধর্মীয় গ্রন্থের বাধ্যবাধকতা কমে এসেছে, সংবিধান ও আইন পুনর্গঠিত হয়েছে এবং সাংস্কৃতিক জগতে পরিবর্তনকেই উদযাপন করা হয়েছে। আজকের সাংস্কৃতিক কর্মীরা পরিবর্তনকেই অনুপ্রাণিত করেন, তারা নতুন পথ খোঁজেন, প্রচলিত নীতিকে চ্যালেঞ্জ করেন।
প্রশ্ন হলো, এই প্রবাহকে কি রোধ করা সম্ভব? নীতিগতভাবে হ্যাঁ। আমরা চাইলে নতুন, কঠোর নিয়ম ও মূল্যবোধ তৈরি করতে পারি এবং ভাষা ও আইনের মাধ্যমে সেগুলোকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিগত নজরদারি আমাদের নিয়ম ও মূল্যবোধকে আরও সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারবে, এমনকি মানুষের আবেগ ও সামাজিক প্রভাব পর্যন্ত পরিমাপ করা সম্ভব হবে। এভাবে একটি এমন কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে যা ধর্মীয় গ্রন্থের মতোই কঠোরভাবে সমাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
তবে, যে কোনো কাঠামোরই অবক্ষয় ঘটে। আমাদের বর্তমান আইনি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলও হয়েছে। কিন্তু ইংরেজি ভাষা ও গণিতের মতো কিছু কাঠামো স্থায়ী থেকেছে, কারণ তারা সহজ, কার্যকর এবং সর্বজনস্বীকৃত।
তাই, যদি আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তনকে সীমিত করতে চায়, তবে তা সম্ভব। তবে এর জন্য একটি গভীর ও ব্যাপক সাংস্কৃতিক রূপান্তর প্রয়োজন। বর্তমানে, এটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।