বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

পাকিস্তানে মসজিদে বিস্ফোরণে ৮৩ জনের বেশি নিহত

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ৩১, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

পেশোয়ার, পাকিস্তান: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পুলিশ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে একটি মসজিদে বিস্ফোরণের পর ধ্বংসাবশেষ থেকে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত ৮৩ জনের বেশি লোকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে ১৫০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে।
পাকিস্তানে অত্যন্ত স্পর্শকাতর পুলিশ সদর দফতরের অভ্যন্তরে একটি মসজিদে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিকালে এ বিস্ফোরণ ঘটে। নিহতদের অধিকাংশই পুলিশ সদস্য। এরপরেই সরকার দেশটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। খবর এএফপির।

আফগানিস্তান সীমান্ত বরাবর প্রাক্তন উপজাতীয় এলাকায় যেখানে জঙ্গিবাদ ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে, তার কাছেই প্রাদেশিক রাজধানী পেশোয়ারে বিকালে মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

উদ্ধারকারী সংস্থা ১১২২ এর মুখপাত্র বিলাল আহমদ ফয়েজি বলেছেন, ‘আজ সকালে আমরা ধসে পড়া ছাদের শেষ অংশটি সরিয়ে ফেলতে চলেছি; যাতে আমরা আরো মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারি। তবে, আমরা সেখানে জীবিত কাউকে উদ্ধার করতে পারব- এমন আশা করতে পারছি না।’

মসজিদে রাতাব্যাপী ব্যাপক উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। হামলায় একটি প্রাচীর সম্পূর্ণ এবং এর কিছু ছাদ সম্ভাব্য আত্মঘাতী হামলায় উড়ে যায়। পেশোয়ারের পুলিশ প্রধান মুহাম্মদ ইজাজ খান বলেছেন, ‘অনেক পুলিশ সদস্যরা ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়েছে।’ তিনি অনুমান করেন, মসজিদে ৩০০-৪০০ জন অফিসার নামাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাদের নিরাপদে বের করে আনার চেষ্টা চলছে।’

রক্তাক্ত অবস্থায় আহতরা হামাগুড়ি দিয়ে ধ্বংসাবশেষ থেকে বেরিয়ে আসে ও মৃতদেহগুলোকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়।

পেশোয়ারের প্রধান হাসপাতালের মুখপাত্র মুহাম্মদ আসিম খান বলেছেন, ‘এটি একটি জরুরি অবস্থা। ৮৩ জন নিহত হয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে আরো মৃতদেহ আসায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে।’
অন্ধকার নেমে আসার সাথে সাথে, বেশ কয়েকজন লোক এখনও ধ্বংসস্তুপে আটকা পড়েছিল, যা কংক্রিটের ফাটলগুলোর মাধ্যমে দৃশ্যমান ছিল।’

বিলাল আহমেদ ফাইজি বলেছেন, ‘উদ্ধার অভিযানকালে ‘আমরা তাদের অক্সিজেন দিয়েছি, যাতে তাদের শ্বাস নিতে সমস্যা না হয়।’

নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের কফিন পাকিস্তানের পতাকা মুড়িয়ে সারিবদ্ধভাবে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গার্ড অব অনার দিয়ে তাদের দাফন করা হয়েছে।’

দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে কোন গোষ্ঠী এখনো হামলার দায় স্বীকার করেনি।
পেশোয়ারের পুলিশ সদর দফতর শহরের সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর মধ্যে একটি, আবাসন গোয়েন্দা এবং সন্ত্রাস বিরোধী ব্যুরো ও এটি আঞ্চলিক সচিবালয়ের পাশেই এটির অবস্থান।

দেশের অন্যান্য প্রদেশগুলো ঘোষণা করেছে, তারা বিস্ফোরণের পরে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। চেকপয়েন্ট বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানী ইসলামাবাদের ভবন ও শহরের প্রবেশপথে স্নাইপারদের মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যারা পাকিস্তানকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে, তাদের ভয় দেখাতে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে।’

কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘বিস্ফোরণটি নামাজের জামায়াতের দ্বিতীয় সারি থেকে হয়েছে। তদন্তকারীরা আত্মঘাতী হামলার সম্ভাবনার বিষয় ধারণা করছেন।’

বেঁচে যাওয়া একজন পুলিশ সদস্য শহীদ আলী (৪৭) বলেন, ‘ইমাম নামাজ শুরু করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আকাশে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখেছি। আমি আমার জীবন বাঁচাতে দৌঁড়ে বাইরে গিয়েছিলাম।’ ‘মানুষের আর্তনাদ এখনো আমার মনে প্রতিধ্বনিত হয়।’

যে দিন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ইসলামাবাদে যাওয়ার কথা ছিল, সেদিনই কঠোর নিরাপত্তা লঙ্ঘন হয়েছিল, যদিও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষ মুহূর্তে সফরটি বাতিল করা হয়েছিল।

একটি অত্যাবশ্যক বেলআউট ঋণের অবমুক্তির জন্য পাকিস্তান মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধিদলকে অভ্যর্থনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস এ ‘ঘৃণ্য’ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন ‘ভয়াবহ হামলার’ জন্য শোক প্রকাশ করেছেন।