বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

শিরোনাম

পূর্বাচলে প্লট: শেখ রেহানাসহ তিন সন্তানের বিরুদ্ধে ৩ মামলা, ‘সহযোগী’ হাসিনা

সোমবার, জানুয়ারী ১৩, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে প্লট গ্রহণের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পৃথক তিনটি মামলায় শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিটি মামলায় ১২-১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে রোববার (১২ জানুয়ারি) হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করে দুদক।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার প্লট নম্বর ১৭ সায়মা ওয়াজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে এবং প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট নিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০’-এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭’-এর ৫ (২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

মূল অভিযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে।

হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ দুদক থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা গত ২৭ ডিসেম্বর জানিয়েছিল দুদক। দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।

দুদক গত ২২ ডিসেম্বর হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তার আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। একই দলকে নতুন করে আসা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কমিশন। সবগুলোই অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়েক বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। একইসঙ্গে এ ‘দুর্নীতি’র প্রমাণ দিতে দুদকের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি।

জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যা-নিপীড়নের ঘটনাগুলোর জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিচার করতে আন্দোলনকারীরা তাকে ফেরত আনার জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। গেল ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার হত্যা, গুম ও গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।

জুলাই-আগস্টে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এবং গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনের অভিযোগে দুই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এরই মধ্যে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাকে ফেরত পাঠাতে বেশ কিছু দিন কথা-বার্তার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লিতে চিঠি পাঠিয়েছে সরকার। নরেন্দ্র মোদি সরকার চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি।