প্যাটারসন, যুক্তরাষ্ট্র: বহুজাতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নিজস্বতা রয়েছে। এ নিজস্বতার সঙ্গে সমস্যা ও সফলতার সংজ্ঞাও ভিন্ন ভিন্ন। নিজেদের সমাজ সংস্কৃতির সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র হয়ে উঠেছে এক মিশ্র সংস্কৃতির দেশ। প্রতিটি নাগরিকের অধিকার যেমন আছে, নাগরিক কর্তব্যও আমাদের পালন করতে হয়। বহুজাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে জনসমাজের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করে যুক্তরাষ্ট্রে স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই হোক আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি রাজ্যের প্যাটারসন পেটার্সন অনুষ্ঠিত ‘দেখা সাক্ষাৎ’ অনুষ্ঠানে লেখক, সাংবাদিক ও জনসমাজের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। ইউএসএ প্রথম আলো ফাউন্ডেশন আয়োজিত ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান ছিল এটি। অনুষ্ঠানের আলোচিত বিষয় ছিল কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নে সচেতনা বাড়ানো যায়। দিনব্যাপী হালকা বৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সিতে বসবাসরত অগ্রসর লোকজনদের নিয়ে নির্মল আড্ডা হয়েছিল। অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা, খানিকটা পরিচিতির পর সমাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে আনা হয় অনুষ্ঠানে। মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়াও নাগরিক দায়িত্ব, ভোটাধিকার প্রয়োগ, হাইজিংসহ নানা বিষয় উঠে আসে আলোচনায়।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংস্করণের সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী। অনুষ্ঠান আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় ছিলেন পেটার্সনের নির্বাচিত স্কুল কমিশনার মোহাম্মেদ রশীদ। আলোচনায় অংশ নেন পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মাদ নাজমুল আহসান, পেটার্সন শহরের কাউন্সিলম্যান শাহীন খালিক, স্কুল বোর্ড কমিশনার এডি গঞ্জালেজ ও নাদিয়া হোসাইন, কমিউনিটির নেতা মীর চৌধুরী, সোনালী এক্সচেঞ্জের ব্যাবস্থাপক ফারুক সিদ্দিকী, মন্টিক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেলাল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, লেখিকা শিক্ষিকা এইচবি রিতা।
শাহীন খালিক পেটার্সন শহরের পক্ষ থেকে প্রথম আলো পরিবারকে সম্মাননা সনদ দেন। অনুষ্ঠানে ছিলেন তিন প্রজন্মের লোকজন, ছিলেন ভিন্ন ভিন্ন অভিবাসীর প্রতিনিধিরা। ছিলেন শহরের স্কুল-কলেজ ও ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই নাগরিক দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেছেন।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। এইচবি রিতা বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানসিক স্বাস্থ্য বলতে বোঝানো হয়, সেই মানসিক স্থিতিশীলতা, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও আচরণকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। ঠিক যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দুঃখজনকভাবে, আমাদের বাঙালি কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার অভাব খুবই প্রকট। অনেকে মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা মানে দুর্বলতা প্রকাশ করা। আমাদের সমাজে মানসিক রোগকে লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখা হয়। যার ফলে অনেকেই প্রয়োজনীয় সাহায্য নেন না ও নিজেরা একাকিত্বে ভোগেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। কারণ, এটি আমাদের জীবনযাত্রা, কর্মক্ষমতা ও পারিবারিক সম্পর্ককে সরাসরি প্রভাবিত করে। আমাদের উচিত পরিবারের সদস্য, বন্ধু ওবং কমিউনিটির মানুষদের পাশে দাঁড়ানো এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সাহায্য নিতে উৎসাহিত করা। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সামাজিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা বাড়ালে আমরা শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নই বাড়বে না, পাশাপাশি স্নায়ুবিক ও জ্ঞানীয় সমস্যাগুলোকেও কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হবে।’
অনুষ্ঠানে শুধু আলোচনাই ছিল না, দফায় দফায় রকমারী খাবার ছিল বাড়তি আকর্ষণ। সবগুলো খাবারই ছিল উপাদেয় ও ঘরে বানানো। বৃষ্টিস্নাত হেমন্তের সন্ধায় গরম কিমা বার্গার, সিঙ্গারা, পাকোড়া, চা, বিরিয়ানী, সালাদ, দই এবং ফুলুরী পিঠা সবার তৃপ্তি এনেছিল।
ঐতিহ্যের শহর পেটার্সনের দক্ষ সংগঠক মোহাম্মেদ রশীদ, তিনি পেটার্সনের বোর্ড অফ এডুকেশন কর্মরত আছেন। মোহাম্মেদ রশিদের সহযোগিতা ও উদ্দীপনায় অনুষ্ঠানটি আনন্দঘন হয়ে উঠেছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে।
উপস্থিত সবাইকে হিউম্যান কনসার্ন ইউএসএ’র পক্ষ থেকে গিফট কার্ড উপহার দেয়া হয়েছিল, পছন্দের কিছু কেনাকাটা করার। হিউম্যান কনসার্ন ইউএসএ’র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিসটার জয়নাব।
তিনি শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘প্রথম আলো ফাউন্ডেশনের এমন ভাল উদ্যোগের পাশে ভবিষ্যতেও তারা সহযগিতা নিয়ে এগিয়ে আসবেন।’
জাকির হোসেইন ও মোহাম্মদ রশিদের গানে, কবি এলি বড়ুয়ার কবিতায় অনুষ্ঠান উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল হক, শেলী জামান খান, রোকেয়া দীপা, কুলসুম আখতার সুমি, সায়ান সিদ্দিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জান্নাতুল টুম্পা, ডিজে সাঈদ, তামিনা রশিদ, হেলাল মহীউদ্দীন, সাব্রিনা ইয়াসমিন, এমএইচ পাহলভি।