শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বন্দুক হামলা-প্রাণহানী/সহিংসতা; আতঙ্কই হয়ে উঠছে মার্কিনিদের নিত্যসাথী

মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৯, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ওয়াশংটন ডিসি: বন্দুক হামলা ও প্রাণহানী যুক্তরাষ্ট্রে  এখন প্রায় নিয়মিত ঘটনা। প্রতিদিনই দেশটির কোথাও না কোথাও প্রাণ যাচ্ছে গুলিতে। ফলে ভয় আর আতঙ্কই যেন হয়ে উঠছে মার্কিনিদের নিত্যসাথী। অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে কাজ করা মার্কিন গবেষণা সংস্থা গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৬০০’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সংস্থাটি বলছে, ‘২০২২ সাল হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার ঘটনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বছর।’ খবর সিএনএনের।

এ বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৬০৭টি বন্দুক হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিন হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে ৬৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি।  

তবে গত বছর একই সময়ে এ সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯০টি বন্দুক হামলার ঘটনায় তিন হাজার ২৬৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। এতে নিহত হন ৬৪৫ জন। আর ২০২০ সালে ৬১০টি হামলায় দুই হাজার ৮৭৩ জন গুলিবিদ্ধ হন, মৃত্যু হয় ৪৬৩ জনের। চলতি বছর শেষ হতে আররো এক মাস বাকি থাকায়, ২০২২ সাল বন্দুক সহিংসতার দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বছরের তালিকায় নাম লেখাতে পারে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের।  

গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ জানায়, বছরের এখন পর্যন্ত মোট দিনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার ঘটনা অনেক বেশি। ২০১৯ সাল থেকেই এ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে মাত্র এক সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বন্দুক সহিংসতায় ২৪ জন নিহত ও কমপক্ষে ৩৭ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ১-২২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ৩২টি বন্দুক হামলা হয়েছে, যাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১৭৭ জন। নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। গত বছরের একই সময়ে ৩৬টি হামলায় ১৬০ জন গুলিবিদ্ধ ও ৩৪ জন নিহত হন।  

এ দিকে’ যুক্তরাষ্ট্রে লাগাতার বন্দুক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিজ দেশের ভ্রমণকারীদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। এ তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান এমনকি ইসরাইলও। 

অস্ট্রেলিয়া থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আগ্রহী তাদের স্থানীয় নির্দেশনা ও নিয়মকানুন মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে দেশটির সরকার। নিজ দেশের নাগরিকদের রাতে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে ভ্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছে কানাডা সরকার। একই নির্দেশনা দিয়ে নির্জন এলাকায় একা চলাচল না করার পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটেন সরকার।

পর্যটন খাতকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে জার্মানিও তার নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলার কথা জানিয়েছে। একই পরামর্শ দিয়েছে জাপান, নিউজিল্যান্ড ও মেক্সিকো। এছাড়া দৃঢ় সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ক্ষেত্রে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে ইসরাইল। 

গত এপ্রিলে প্রকাশিত ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আইনিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার সুযোগ অনেকটা অবাধ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ কোটি নাগরিকের হাতে রয়েছে ৩৯ কোটি আগ্নেয়াস্ত্র। বিভিন্ন সময়ে এসব আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠলেও অস্ত্র উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের চাপে তাতে কোনো কাজ হয় নি। উল্টো করোনা মহামারির মধ্যে বন্দুক সহিংসতা আরো বেড়ে যায়।’ 

সিডিসি বলছে, ‘২০২০ সালে আগ্নেয়াস্ত্রের কারণে এক থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু আগের বছরের চেয়ে ৩৩দশমিক চার শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বিগত বছরগুলোতে তরুণ আমেরিকানদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল গাড়ি দুর্ঘটনা। এরপরই ছিল বন্দুক হামলা সংক্রান্ত মৃত্যু। 

সিডিসির গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্রে শিশু-কিশোরদের সার্বিক প্রাণহানির হার ২৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ। গুলিতে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর মধ্যে হত্যার পাশাপাশি রয়েছে আত্মহত্যা, ‘অবহেলাজনিত’ ও ‘অনিচ্ছাকৃত’ মৃত্যু। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যানালস অব ইন্টারনাল

মেডিসিনে প্রকাশিত পৃথক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম বারের মত আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক, যা জনসংখ্যার ৩ শতাংশের মত।