ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। নির্বাচনে আমাদের ফলাফল যাই হোক, এটা কোন বিষয় না। আমরা চাই, জনগনের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক। কারো দয়া-দাক্ষিণ্যে সাংসদ-মন্ত্রী হলে তাতে কোন সম্মান নেই। গণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যেই প্রকৃত সম্মন। প্রজাতন্ত্র হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষই দেশের মালিক। তারা দেশ পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। প্রতিনিধিরা দেশের মালিকদের (সাধারণ জনসাধারন) ইচ্ছে অনুযায়ী দেশ পরিচালা করবেন। সাধারণ মানুষের ইচ্ছেমত প্রতিনিধিরা কাজ না করলে পরবর্তী দেশের মালিকরা যেন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে, সব মানুষ সব অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে। সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি।’
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শ্যামপুর থানা সংলগ্ন প্রধান সড়কে শ্যমাপুর-কমতলী থানা জাতীয় পার্টির কর্মী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মোহাম্মদ কাদরে আরো বলেন, ‘ভাল জিনিসের ভাল দাম দিতে হয়। সস্তা জিনিস কখনোই ভাল হয় না। তাই, দেশের মঙ্গলের জন্য হয় ভাল দাম দিতে হবে।’
সে জন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন তিনি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে সমাবেশে গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, ‘১১ বছর পার হল, এখনো সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার বিচার হয়নি। ১১ বছরে ৯৫ বার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থা। দেশের মানুষ সাগর-রুনী হত্যার বিচার দেখতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছিলেন ঘতকরা চিহ্নিত হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হবে। ১১ বছর পার হল, দেশের মানুষ জানতে পারল না, কেন বা কারা এ নির্মম হত্যাযজ্ঞ ঘটাল। সাগর-রুনী হাত্যাকান্ড কী সাংবাদিকদের জন্য সতর্কবার্তা? এতবড় হত্যান্ডের বিচার হচ্ছে না অথচ কারো যেন জবাবদিহিতা নেই। সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের বিচারে দায়িত্বহীনতার দায় কেউ এড়াতে পারবে না। দেশের মানুষ মনে করছে, প্রভাবশালী একটি মহল সাগর-রুনী হত্যা মামলা প্রভাবিত করছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, সত্য ফাঁস হয়ে যাবে, সেই ভয় থেকেই সাগর-রুনী হত্যার বিচার হচ্ছে না।’
তিনি গণ মাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আরো সাহসী হয়ে সত্য তুলে ধরুন। সাগর-রুনী হত্যার বিচার হতেই হবে।’
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আট কোটি দশ লাখ ডলার চুরি হল। কিন্তু, জড়িতদের শাস্তি হল না।’
তিনি বলেন, ‘গণ মাধ্যমের একটি রিপোর্টে অন্তত ১৩ জন বাংলাদেশীর নাম উঠে এসছে। কিন্তু, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ডলার চুরির অভিযোগে অভিযুক্তদের কারো কারো প্রমোশন হয়েছে,। অবার কেউ কেউ ইতিমধ্যেই অবসরে চলে গেছেন। আট কোটি দশ লাখ ডলারের মধ্যে মাত্র দেড় কোটি ডলার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাকি টাকা কবে দেশে আসবে তা কেউ জানে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই। ডলার চুরির ঘটনা ৩৮ দিন কেন গোপন রাখা হল? বাংলাদেশ ব্যাংকের তখনকার গভরর্ণর কেন এর ব্যাখা দিলেন না? ডলার চুরির দায় তিনিও এড়াতে পারেন না।’
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে রাজনীতি করছি। আমরা আইনের শাসন নিশ্চিত করতে চাই। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালনের পরিবর্তে এখন শিষ্টের দমন আর দুষ্টের লালন চলছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন, দলবাজী, টেন্ডারবাজী প্রতিরোধ করতেই আমাদের রাজনীতি। নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু মানুষের মুখ পরিবর্তন হলে দেশের ভাগ্য ফিরবে না। যদি মানুষের মুখের পরিবর্তন হয় আর টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, দলবাজী, দুর্নীতি ও দুঃশাসন চলতেই থাকে, তাতে দেশের মানুষের কোন উপকার হবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে।’
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, ‘দেশের মানুষ সিমাহীন কষ্টে আছে। প্রতিদিনই নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন আর মাংস কিনতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ মাছ কিনতেও পারবে না। নিত্য পণের দাম বৃদ্ধির কথা উঠলেই সরকারের পক্ষ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে। অনেক দেশের উদাহরণ দিয়ে বলা হচ্ছে, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে। কিন্তু ,সে সব দেশের মানুষকে সে দেশের সরকার নগদ টাকাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, অথচ সামান্য কিছু টাকা ব্যায় করলেই রেশন কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহের মাধ্যমে দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘সিরিয়া-তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২৫ হাজার মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। বাংলাদেশও মারাত্মক ভূমিকম্প ঝঁকিতে আছে। অথচ, ভবন নির্মানে বিল্ডং কোড মানা হচ্ছে না। ঘুষের মাধ্যমে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। দুর্নীতির কারণে দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন মারাত্মক ঝুকির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। কোটি কোটি মানুষের জীবন চরম ঝুকির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। অথচ কারো যেন কিছুই করার নেই।’
সৈয়দ আবু হোসেন ববলা বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কন্ঠরোধ করা যাবে না। মামলা-হামলা মোকাবেলা করেই জাতীয় পার্টি এগিয়ে চলবে। দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়েই চলছে, তাতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এভাবে নিত্য পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ তা মেনে নেবে না।’
রমজানের আগেই নিত্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আহবান জানান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।
শ্যামপুর কদমতলী থানা আয়োজিত কর্মী সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন মিলন, আলমগীর সিকদার লোটন, জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান, সালমা হোসেন, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন দেওয়ান, এমএ সোবহান, শরফুদ্দিন আহমেদ শিপু, সুজন দে, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মো. আবু তৈয়ব, মাসুক রহমান, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল, শাহনাজ পারভীন, ইব্রাহিম আজাদ, আবু ওয়াহাব, আরিফুল ইসলাম রুবেল, মাহবুবুর রহমান খসরু, কাওসার মোল্লা, জহির উদ্দিন লিটন, মেহবুব হাসান, ইব্রাহিম খাঁন জুয়েল, শাহ ইমরান রিপন।