বাংলাদেশে বর্তমানে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা চার কোটি ১৭ লাখ, এরমধ্যে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশের অবস্থা গুরুতর। সম্প্রতি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, ‘দেশে অতি দারিদ্র্যের হার কমেছে।’
বিবিএসের ২০২২ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দেশে অতি দারিদ্র্যের হার পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ১২ দশমিক নয় শতাংশ।
‘বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪: সংঘাতের মধ্যে দারিদ্র্য’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউএনডিপি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্র অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের সাথে যৌথভাবে এটি প্রকাশ করেছে ইউএনডিপি।
প্রতিবেদনে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিস্থিতি বুঝতে পৃথিবীর ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর গবেষণা করা হয়েছে। এতে ২০২২-২৩ বছর পর্যন্ত এক দশকের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এখানে মানুষের পর্যাপ্ত আবাসন, পয়োনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ভোজ্যতেল ও পুষ্টির মত অতিপ্রয়োজনীয় সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কেমন ঘাটতি রয়েছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শিশুরা কী হারে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে, তা-ও বিবেচনায় এসেছে প্রতিবেদনে।
সূচক অনুযায়ী, পৃথিবীর ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকই সংঘাতকবলিত দেশের বাসিন্দা। চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর ৮৩ শতাংশের বেশি বসবাস করেন আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ কোটি ২০ লাখ দরিদ্র মানুষ এমন পরিবারে আছেন, যে পরিবারের অন্তত একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন।
বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মানুষের জীবনযাত্রার মান (৪৫ দশমিক এক শতাংশ)। এরপর রয়েছে শিক্ষা (৩৭ দশমিক ছয় শতাংশ) ও স্বাস্থ্য (১৭ দশমিক তিন শতাংশ)।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক সাত শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ মানুষ।
সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। সে হিসাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তিন কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের প্রাক্তন মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ বলেন, ‘ইউএনডিপির এ সমীক্ষায় যেভাবে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়েছে, তার সাথে বাংলাদেশের বিবিএস বা অন্যান্য সংস্থার সমীক্ষার তুলনা করা ঠিক হবে না। এ সমীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি বৈশ্বিক তুলনায় কী অবস্থায় আছে, তার একটি চিত্র পাওয়া গেল।’
তিনি বলেন, ‘গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশের ডলার সংকট ও বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সমস্যার কারণে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তা বিভিন্ন সূচকের মাধ্যমে এ সমীক্ষায় বোঝা গেছে। এখান থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
সূচক অনুযায়ী, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দরিদ্র মানুষের বসবাস ভারতে। দেশটির ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২৩ কোটি ৪০ লাখই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আছেন। এরপরই রয়েছে পাকিস্তান (নয় কোটি ৩০ লাখ), ইথিওপিয়া (আট কোটি ৬০ লাখ), নাইজেরিয়া (সাত কোটি ৪০ লাখ) ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (ছয় কোটি ৬০ লাখ)। পৃথিবীতে চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই এ পাঁচ দেশের বাসিন্দা।
ইউএনডিপি প্রকাশিত সূচকে দেখা গেছে, দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরা। চরম দারিদ্র্যে থাকা মানুষের মধ্যে প্রায় ৫৮ কোটি ৪০ লাখের বয়স ১৮ বছরের কম। এ সংখ্যা পৃথিবীর মোট শিশুর ২৭ দশমিক নয় শতাংশ। এর তুলনায় চরম দারিদ্র্যে রয়েছে পৃথিবীর মোট প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ।