নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধ না হলে হাঙ্গার স্ট্রাইকে যেতে বাধ্য হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন পরিষদের সভাপতি নবেন্দু বিকাশ দত্ত। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দ্বিজেন ভট্টাচার্য্যের সঞ্চালনায় ও নবেন্দু বিকাশ দত্তের সভাপতিত্বে এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান পরিষদের নেতা বিষ্ণু গোপ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘১৯৮৮ সালে এরশাদ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার ভিত্তিতে রচিত ১৯৭২ সালের শাসনতন্ত্রের অন্যতম মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণার পর দাউদকান্দি ঋষি পাড়ায় আক্রমণকারী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা ঘোষণা করেছিল, ‘এ দেশ আবার পাকিস্তান হয়ে গেছে, কাফেরদের এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে।’ তখন থেকে নিয়মিতভাবে সংখ্যালঘু বিরোধী সামপ্রদায়িক সন্ত্রাসের কার্যক্রমটি অব্যাহত রয়েছে। ২০১২ সালে রামু, ২০১৩ সালে নন্দীরহাট, ২০১৬-তে নাসিরনগর, ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাছড়া, ২০১৯ সালে ভোলার বোরহানুদ্দীন, ২০২১ সালে কুমিল্লা, চট্টগাম ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ও সম্প্রতি ঠাকুরগাঁয়ে সংঘটিত ঘটনাবলী সম্পর্কে আপনারা আবগত আছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন চলছে। কারণ, ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোন সরকারই সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার করেনি। ধর্মীয় মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী ওই সব নির্যাতনকারীরা জানে যে, সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ, খুন বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে তাদের পুরো গ্রাম উৎখাত করে ফেললেও বিচার হবে না। ১৯৭২-২০০০ সাল পর্যন্ত সংঘটিত নির্যাতনের ঘটনাবলীর হোতাদের তদন্ত করে কোন তালিকা এখনো করা হয়নি। তবে, ২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচন পরবর্তী সংঘটিত বর্বর আক্রমণের ৫৮ হাজার কেইস লিপিবদ্ধ আছে মানকাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবিরের বই ও জজ সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত প্রোব কমিশন রিপোর্টে। তার পরে হাজার হাজার ঘটনা গণ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ও সেগুলোর অপরাধীদের তালিকা সরকারের কাছে রয়েছে। অথচ, ব্যতিক্রম হিসেবে হাতে গুনা কয়েকটি কেইসে অভিযুক্তদের ছাড়া সরকার সচরাচর সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার করে না।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘অবিরাম এ বর্বর নির্যাতনে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়ায় সংখ্যালঘুরা ১৯৭১ সালে যে স্থলে মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক সাত শতাংশ ছিল, আজ ২০২৩ সালে সেটা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক এক শতাংশে। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটা ১৯৪৭ সালে যে স্থলে ছিল ৯৮ দশমিক ছয় শতাংশ আজ ২০২৩ সালে সেটা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৮ শতাংশে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ‘ভারতে জাতীয় সংখ্যালঘু আইন তো আছেই, একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে হেইট ক্রাইম আইন রয়েছে; যার বলে কেউ বর্ণবাদী বা ধর্মীয় সন্ত্রাসের শিকার হলে ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সন্ত্রাসীকে ফেডারেল অপরাধে অপরাধী হিসেবে ত্বরিৎ বিচারের ব্যবস্থা করে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন টমাস দুলু রায়, রণবীর বড়ুয়া ও শিতাংশু গুহ।