শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বান্দরবানে নতুন জঙ্গি সংগঠনের ১৭ সদস্যসহ গ্রেফতার ২০

বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৮, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

বান্দরবান: বান্দরবান জেলার পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ১৭ সদস্যসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এর মধ্যে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তিন সদস্য রয়েছে।

র‌্যাব জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলানায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাবের আইন ও গণ মাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত ২০ জনের মধ্যে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ১৭ জন ও কেএনএফের তিন সদস্য রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুমিল্লা সদরের মো. মাহবুবুর রহমানের ছেলে মো. আস সামী রহমান ওরফে সাদ (১৯), বরুগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার মালেক মোল্লার ছেলে মো. সোহেল মোল্লা ওরফে সাইফুল্লাহ (২২), পটুয়াখালী জেলা সদরের ফোরকান ফকিরের ছেলে মো. আল আমিন ফকির ওরফে মোস্তাক (১৯), কুমিল্লার লাঙ্গলকোটের আব্দুল লতিফের ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে ওমর ফারুক (২৭), পটুয়াখালী জেলা সদরের আলতাফ হোসেনের ছেলে মো. মিরাজ শিকদার ওরফে আশরাফ হোসেন ওরফে দোলন (২৬), মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ির আব্দুল কুদ্দুসের জেলে রিয়াজ শেখ ওরফে জায়েদ (২৪), পটুয়াখালী জেলার মহিপুরের ইসমাইল হোসেন হাওলাদারের ছেলে মো. ওবায়দুল্লাহ ওরফে ওবায়দুল ওরফে সাকিব ওরফে শান্ত (২০), পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জের আনিছ মুসল্লির ছেলে জুয়েল মাহমুদ ওরফে মাহমুদ (২৭), টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ির দুলাল রহমানের ছেলে মো. ইলিয়াস রহমান ওরফে তানজিল ওরফে সোহেল ওরফে তানবোয়াং, ঝলকাঠী জেলা সদরের আবু ইউসুফ হাওলাদারের ছেলে মো. হাবিবুর রহমান ওরফে মোড়া (২৩), কুমিল্লা জেলা সদরের মালেক ফরাজীর ছেলে মো. সাখাওয়াত হোসাইন ওরফে মাবরুর ওরফে রিসিং (২১), বরিশাল জেলার কোতয়ালীর নাসির হাওলাদারের ছেলে মো. আব্দুস সালাম রাকি ওরফে দুমচুক ওরফে রাসেল, কুমিল্লা জেলার লাকসামের মাওলানা হোচাইন আহম্মদের ছেলে যোবায়ের আহম্মেদ ওরফে আইমান ওরফে আইমান ওরফে রেনাল ওরফে ওমর (২৯), হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের মৃত কুতুবুর রহমানের ছেলে তাওয়াবুর রহমান সোহান ওরফে মিন্ট ওরফে মাওবক ওরফে জাকির আলম (২০), বরিশাল জেলার গোলাম মোস্তফার ছেলে মোহাম্মদ মাহমুদ ওরফে ডাকুয়া ওরফে হাকা (২০) ও মাগুরা জেলার মৃত শামসুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আবু হুরাইরা ওরফে মিরাজ ওরফে সাইসো।

অন্য দিকে, কেএনএফের গ্রেফতার কৃত সদস্যরা হলেন রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ির জলসুর পাংকুয়ার ছেলে মালসম পাংকুয়া (৫২) এবং লাল মোল সিয়াম বম ও ফ্লাগ ক্রুস।

র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তাদের কাছ বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, উগ্রবাদী বই, কন্টেন্ট, লিফলেট, নগদ ৭ লাখ টাকা ও বিভিন্ন সরঞ্জমাদি উদ্ধার করা হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘অভিযানে পাহাড়-সমতল মিলে এ পর্যন্ত ৫৫ জন জঙ্গি সদস্য এবং কেএনএফের ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাবের প্রকাশ করা ভিডিওতে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গ্রেফতার হওয়া ১৭ জনের মধ্যে পাঁচজনকে দেখা গেছে।

আল মঈন বলেন, ‘নাথান বমের বিশস্ত দুই সহযোগীকে আটক করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদে তারা নাথানবম কোথায় আছেন তা জানায়নি। তারা এ জঙ্গি সংগঠনকে সহযোগিতা করে আসছিল। জঙ্গীদের নিয়ে আসা, প্রশিক্ষণ দেয়া ও পথ প্রদর্শকসহ সব কাজে সহযোগিতা করছিলেন তারা। তাদের সাথে নাথান বমের যোগাযোগ ছিল।’

অবৈধ উপায়ে জঙ্গিদের থেকে নেয়া সাত লাখ টাকা দিয়ে অস্ত্র কেনার বিষয়টি নাথান বমের নির্দেশনায় কেএনএফের সদস্যরা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। সাত লাখ টাকার অস্ত্র কিনে তা জঙ্গীদের হাতে দেয়ার পরিকল্পনা করছিল।

যারাই রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের সাথে জড়িত হবে, যারা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের লালন পালন করবে তাদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব বদ্ধ পরিকর বলে তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন।

র‌্যাব সূত্র জানায়, মঙ্গলবারের (৭ ফেব্রুয়ারি) গোলাগুলির ঘটনায় র‌্যাবের আট সদস্য আহত হয়েছেন । তবে বড় ধরনের কোন আঘাত পায়নি তারা। আহতদের সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।

র‌্যাব জানায়, ২০ অক্টোবরের অভিযানের কারণে জঙ্গীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। জঙ্গীরা এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন না। এখন তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্নভাবে আত্মগোপনে আছেন। তবে তাদেরকে কেউ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মুভমেন্ট সম্পর্কে জানাচ্ছে। তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন, তা না হলে তারা অস্ত্র কিনতেন না। কেএনএফের সদস্যদের তথ্য অনুযায়ী, তাদের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ২০০।

র‌্যাব জানায়, ৫৫ জনের তালিকায় এ পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো ২৮ জনকে এখনো আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।