চীন/যুক্তরাষ্ট্র: বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে চীন। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মনে করেন, তার দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যেতে পারবে। এ অবস্থায় বলা যায়, পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে চীন। আর সে কারণেই রফতানি নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা চীনকে প্রযুক্তিগত খাতে বিস্তার লাভে বাধা দিচ্ছে। যদিও তাদের এ কৌশল কার্যকর হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। খবর দ্য ইকোনমিস্টের।
বর্তমান পৃথিবীতে চীন একটি নেতৃস্থানীয় বৈজ্ঞানিক শক্তি। পৃথিবীর বিশেষ করে রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক সেরা গবেষণা হয়েছে দেশটির বিজ্ঞানীদের হাতেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য বিজ্ঞানীদের তুলনায় বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ জার্নাল ও প্রবন্ধে চীনা বিজ্ঞানীদের অবদান বহু বেশি। চীনের সিংহুয়া ও ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় দুইটি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির মতই অত্যাধুনিক গবেষণা করে।
চীনা পরীক্ষাগারগুলোতে সুপার কম্পিউটার ও অতি উচ্চ শক্তির আবিষ্কার থেকে ক্রায়োজেনিক ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ পর্যন্ত বেশকিছু উন্নত কিট রয়েছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যদিও এগুলোর তুলনা চলেনা; তবে সেগুলোও বেশ চিত্তাকর্ষক।
এছাড়া, চীনে প্রচুর প্রতিভাসম্পন্ন গবেষক রয়েছেন, যারা পশ্চিমে পড়াশোনা করেছেন বা কাজ করেছেন, তারা এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন। চীনও এখন বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মত পৃথিবীর শীর্ষ স্থানীয় এআই গবেষকদের দ্বিগুণেরও বেশি চীনে ডিগ্রি নিয়েছে।
বাণিজ্যিক উদ্ভাবনেও চীন পুরনো অনুমানকে পাল্টে দিচ্ছে। এটি যেসব ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক যানবাহন রফতানি করে, তা কেবল সস্তা নয়, অত্যাধুনিকও। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বহু প্রতিষ্ঠানের বাধায় চীনা টেলিকম ফার্ম হুয়াওয়ে খুব বেশি লাভের মুখ না দেখলেও এখন এর পুনরুত্থান হয়েছে। যদিও এটি অ্যাপল বা মাইক্রোসফটের রাজস্বের এক-তৃতীয়াংশ উপার্জন করে। তবে, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ততটাই ব্যয় করে, যতটা তারা গবেষণা ও উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করে।
চীন এখনো পৃথিবীর প্রভাবশালী প্রযুক্তিগত শক্তি নয়। হুয়াওয়ের এখনো উন্নত চিপগুলোতে সীমিত অ্যাক্সেস রয়েছে। এছাড়াও, দেশের বহু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলো অনমনীয়; এগুলো তাদের মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে।
এছাড়া, গবেষণায় খরচের বেশিরভাগই রাষ্ট্রের ক্ষমতাশীলদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আর কিছু মাঝারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলো এখনো মাঝারিমানের গবেষণা করে। তাই, বলা যায়, চীনের উদ্ভাবন এখনো তেমন দক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি। তবে, এ সব অদক্ষতা সত্ত্বেও জিনপিং এক্ষেত্রে বিশ্ব মানের একটি জায়গা তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভাল বিজ্ঞানের সাথে নয়া জ্ঞান সামনে আসে, যা মানবজাতির উপকার করে, পৃথিবীর সমস্যাগুলোর সমাধান করে ও জীবনকে উন্নত করে। চীনা কৃষিবিদদের কারণেই আজ বিশ্বব্যাপী কৃষকরা বেশি বেশি ফসল ফলাতে পারে। এর পেরোভস্কাইটভিত্তিক সৌর প্যানেলগুলো গোবি মরুভূমির মত গ্যাবনেও কাজ করবে।
তবে, চীন উদ্ভাবনীর দিক থেকে সামরিক সরঞ্জাম খাতে আরো উন্নতি করতে পারে। যেমন – কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বা হাইপারসনিক অস্ত্র। এটি দেশটির প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবে রূপান্তর করার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য রাখবে।
আর এসবই যুক্তরাষ্ট্রকে দ্বিধায় ফেলে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ডেটা, প্রতিভা ও ধারণার প্রবাহকে সীমিত করার চেষ্টা করেছে। তবে, এসব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীন তার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে যাচ্ছে, যার অন্যতম উদাহরণ হুয়াওয়ে।
তবে, প্রযুক্তিগতভাবে কোন একটি কর্তৃত্ববাদী সমাজের ‘ফ্রন্টলাইনে’ চলে আসা খুবই উদ্বেগজনক। তবুও যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের মত হয়ে উঠার চেষ্টা না করে বরং তার নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য শক্তির ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাওয়া উচিত।