রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বুক জুড়ে এক টুকরো মায়া!

সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

অভ্র বড়ুয়া: কয়েক দিন আগে ঢাকা থেকে কিছু গুরত্বপূর্ণ কাজ শেষে চট্টগ্রামের নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন শাহরিয়ার। রাত ১১টার ট্রেনে উঠে বসলেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য। বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। ট্রেনের সে শব্দের মধ্যেও বৃষ্টির আওয়াজ যেন ট্রেনের ভেতর স্পষ্ট শোনা যায়। শাহরিয়ার মনের অজান্তে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছেন, অন্ধকার আকাশের পানে, বিষন্ন মনে। মনটা কেন জানি তার মায়ার কাছে ছুটে যেতে চাইছে। আর ব্যতিব্যস্ত সে মনে ঘুরছে কত প্রশ্ন মায়াকে নিয়ে। মায়া বৃষ্টিতে কষ্ট পাচ্ছে না তো? তার ঠান্ডা লাগলে? বজ্রপাতের বিকট শব্দে সে ভয় পাচ্ছে না তো? সে কী শাহরিয়ারকে খুঁজছে? এমন আবেগ ভরা হাজারো প্রশ্ন নিয়ে চা পান করতে করতে হঠাৎ ট্রেনটি একটি স্টেশনে থামল। ফের চলতে শুরু করল। অঝোর ধারায় শাহরিয়ারের দুই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।প্রতিটি অশ্রু যেন হাজারো কষ্টস্নাত গল্পের রচনা।

শাহরিয়ার ঠিক করলেন ট্রেন থেকে নেমে বৃষ্টি হোক আর রোদ, এক বার হলেও মায়ার কাছে ছুটে যাবেন। মায়ার শূন্যতা যে বড় কষ্ট দিচ্ছে শাহরিয়ারকে। মায়ার কোমল-নিষ্পাপ হাসি, দুষ্টমি, পুরো ঘরে দৌঁড়ে বেড়ানো, চঞ্চলতা, আদুরে চোখ- এসব যেন শাহরিয়ারকে শুধুই আবেগ আর তীব্র কষ্টের মুখোমুখি নিয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিন; প্রতিমুহূর্ত। স্মৃতি যতই পুরনো হোক, ততই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। যখন স্মৃতিটা হারানোর হয়, তখন তো কষ্টের মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম পৌঁছে শাহরিয়ারের গন্তব্য মায়ার শীতল মাটির ঘরে।মায়ার মাটিকে একটু ছুঁয়ে দেখার তাড়না। বিড়াল মায়ার খুব প্রিয়, খেজুর খেতেও সে ভীষণ ভালবাসে। মায়ার সেসব আবদার কিছুই নেই আর এখন। তারপরও পথের একধারে সিএনজি থামিয়ে কিছু খেজুর নিয়ে নিলেন শাহরিয়ার। অবশেষে মায়ার মাটির ঘরে পৌঁছালেন। চারিদিক ভীষণ স্তব্ধ। সকালবেলাটাও যেন কেমন ধূসর, বিধ্বস্তের মত লাগছিল শাহরিয়ারের।মায়ার বাড়িটা নীল পলিথিনে ঢাকা।কিন্তু, এই মায়া কোথায়? তাকে এক পলক দেখতে পারবেন না শাহরিয়ার? এই এক টুকরো মায়ার নাম সেহঝি্ল। পৃথিবীটাকে বোঝার আগে, সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখার আগে; দূর আকাশে মেঘ, তারা, চাঁদ বন্ধুদের সাথে মিলিয়ে গেছে।পৃথিবী বন্ধুর সাথে এত তাড়াতাড়ি সেহঝি্লের বন্ধুত্ব ভাঙার গল্প মেনে নিতে পারেনি। মাটির ঘরে মায়ার কোন অভিযোগ নেই, নেই কোন আবদার। শাহরিয়ার জানে, সেহঝি্ল তার ডাকে সাড়া দেবে না। তারপরও বাবা! বাবা! করে ডেকেই যায়, এ ডাকটার মধ্যে কত অসমাপ্ত কথা, আদর, ভালবাসা বাকি ছিল, তা শাহরিয়ার সেহঝি্লকে বলার সময়টা পেলেন না। কবরের পাশে খেজুর রেখে সেহঝি্ল বিহীন অনাড়ম্বর শহরে ফিলেন শাহরিয়ার। ফেরার পথে ছোট্ট সেহঝি্ল বাবাকে বলে, সে অনেক ভাল আছে। সে যে ফুল হয়ে ফুটে আছে। সে যে অনেক দূরে…শাহরিয়ার চাপা কষ্ট, কান্নাও অশ্রুসিক্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন।

মৃত্যু মেনে নেয়া যায়। অকাল মৃত্যুটা মানা যায় না। তারপরও মৃত্যুর কাছে বয়স কোন বিষয় না। স্বাভাবিক তো কখনোই হওয়া যায় না। কিন্তু, স্বাভাবিকতার হাত ধরে যে পথ চলতে হবে। এটাই সত্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, দার্জিলিং, ভারত।