বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষেণের দাবি

সোমবার, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

কুমিল্লা: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশেকে সামনে রেখে ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কুমিল্লার বড়িটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের দাবি উঠেছে। ভাষা আন্দোলনে কুমিল্লার এ সন্তান ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব তুলেছিলেন। তিনি সরকারি কাগজে বাংলা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে সোচ্চার হন। তিনি অধিবেশনে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘গণপরিষদে যে কার্যবিবরণী লেখা হয়, তা ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়। পুরো পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন।’ অধিবেশনে ইংরেজি ও উর্দুর সাথে বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবি তোলেন তিনি।

তখনকার পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এতে ক্ষিপ্ত হন। এতে ধীরেন্দ্রনাথ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রোষাণলে পড়ে কয়েক বার কারাবরণ করেন।

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য আগে থেকেই টার্গেটে ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। আর সে কারণেই ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ের বাড়ি থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার ছেলে দিলীপ কুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায় কুমিল্লা সেনানিবাসে। সেখানে ৮৫ বছর বয়স্ক এ দেশপ্রেমিক রাজনীতিককে অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরে বাবা-ছেলে দুইজনকেই হত্যা করা হয়। পরবর্তী তাদের মরদেহের সন্ধানও পায়নি পরিবার।

এরপর থেকে এ বাড়ির অবকাঠামো ক্রমেই ভেঙে পড়তে থাকে। বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি। বর্তমানে বাড়িটি দেখে বোঝার উপায় নেই, এখানে এক সময় অবিভক্ত পাকিস্তানের এক প্রথিতযশা বর্ষীয়ান রাজনীতিক বসবাস করতেন। দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িটি সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে ভাষা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।

গবেষক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহসানুল কবির বলেন, ‘ধীরেন্দ্রনাথের বাড়িটি শুধু কুমিল্লাবাসীর না, এটি দেশের মানুষের অহংকারের জায়গা। কিন্তু, দুঃখজনক বিষয় আজ বাড়িটি জীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়িটিকে কেন্দ্র করে আরো আগেই অনেক কিছু হতে পারত। কেন হয়নি এটি না ভেবে, এখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।’

সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ড়িটি সংস্করণে যদি আইনগত কোন বাধা না থাকে, প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করে এখানে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে একটি জাদুঘর করা হোক। যেটি দেখে শত শত বছর বাংলা ভাষা-ভাষি মানুষ অনুপ্রাণিত হবে।’

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নাজমুল বারী চৌধুরী বলেন, ‘বাংলা ভাষার প্রস্তাবক ও ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতি রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আমরা আন্দোলন সংগ্রামসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি। আমাদের দাবি, এখানে ধীরেন্দ্রনাথের নামে একটি ভাষা জাদুঘর স্থাপন করা হোক।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘এর আগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ২২ লাখ টাকা খরচ করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে স্টেডিয়ামের মূল গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। ধীরেন্দ্রনাথ পরিবারের লোকজন বাড়িটি সংস্কারের দাবি তুললে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় দ্রুত সেটা করে দেবে। যেমনভাবে কুমিল্লায় শচীন দেববর্মণের বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে।’