শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

শিরোনাম

‘মায়ের কান্না’র স্মারকটি নিলেই বিতর্কের উর্ধ্বে থাকতেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: বিনা বিচারে নিহতদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র স্মারকলিপিটি নিজে অথবা তার অধিন কর্মকর্তারা নিরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিতর্কের উর্ধ্বে থাকতেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ক্যাবল অপারেটরস এসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ’র (কোয়াব) সাথে মত বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোয়াবের নব নির্বাচিত সভাপতি এবিএম সাইফুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোশাররফ আলী এতে বক্তব্য দেন। সহ-সভাপতি রাশেদুল রহমান মালিক ও আল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান নাসিম, অর্থ সম্পাদক সেলিম সারওয়ার, সদস্য ফরিদউদ্দিন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখ সভায় যোগ দেন।

হাছান মাহমুদ আরো বলেন, ‘বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিন ‘মায়ের ডাকে’র যারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেছেন, তারা আসলে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিতর্কিত করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে এভাবে বিতর্কিত করা তাদের সমীচীন হয় নি। তিনি সেখানে গেছেন, সেটি শুনে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান বিনা বিচারে ও ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে বিচার ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাসহ যাদের ফাঁসি দিয়েছিল, তাদের সন্তান-পরিজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র জনা ৫০ মানুষ মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য সমবেত হয়েছিল। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তারা স্মারকলিপি দেয়ার সুযোগ করে দেন নি ও সমবেতরা কথাও বলতে পারেন নি। আমি মনে করি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যদি তাদের স্মারকলিপি নিতেন ও তাদের দুইটি কথা শুনতেন, তাহলে তার সেখানে যাওয়া নিয়ে আজকে যে প্রচন্ড সমালোচনা হচ্ছে, সেটি হত না।’

তথ্য মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত সে দিন ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল। যে জাতি স্বাধীন হতে যাচ্ছে, সে জাতিকে পঙ্গু করার লক্ষ্যেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবী দিবসগুলোতে নানা অনুষ্ঠান থাকে, দেশের সাধারণ মানুষ ও বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সবাই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। অনেক সময় বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। সেই দিনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেলে অনেক ভাল হত ও স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে বাঙালি জাতির যে কষ্ট, ত্যাগ, বুদ্ধিজীবীদের আত্মদান সেটির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হত।’

‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠনের কো-অর্ডিনেটরের বাসায় যাওয়ার পরামর্শ কে দিয়েছে আমি জানি না, তবে যারাই পরামর্শ দিয়েছে, তারা সঠিক পরামর্শ দেয় নি’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তার নিজেরও দিবসটার দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল। তাছাড়া তিনি যে সেখানে যাবেন, সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে না, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সেটিই বলেছেন। আর তিনি যাদের কাছে গেছেন, তারা অর্থাৎ ‘মায়ের ডাক’ হচ্ছে সেই সংগঠন যারা গুমের অভিযোগ করছে। কিন্তু যারা গুম হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের অনেককেই ফের খুঁজে পাওয়া গেছে। অনেকেই খুনের ও মাদক চোরাচালানের মামলার দন্ডপ্রাপ্ত-সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী, যাদেরকে বিএনপি গুম হয়েছে বলে বেড়াচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের সামনে রাস্তায় যখন দশটা মানুষ দাঁড়ায়, আমাদের গাড়ি দাঁড়ায়। আমাদেরও নিরাপত্তাকর্মী থাকে, আমাদেরও নিরাপত্তার প্রচন্ড ঝুঁকি আছে। আমি জীবনে কয়েক দফা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। কিন্তু মানুষ যখন কোন জায়গায় কথা বলার জন্য দাঁড়ায়, তখন আমাদের চলন্ত গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। এখানে গাড়ি চলন্ত ছিল না, তিনি যখন ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন তাকে স্মারকলিপি দেয়া হচ্ছিল। অন্তত স্মারকলিপিটা যদি তার স্টাফের মাধ্যমেও নেয়া হত, তাহলে আজকের সমালোচনাটা হত না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগী, আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ ও আমি মনে করি, এ ঘটনা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। তবে যারা এ কাজটি করেছেন ও করার চেষ্টা করেন, তাদের এ থেকে বিরত থাকা উচিত। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও আমি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাব, কেউ যদি এ ধরণের ভুল পরামর্শ দিয়ে তাকে একপেশে করার অপচেষ্টা চালায়, সেটির ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য।’

ক্ষমতায় যেতে পারলে বিএনপি কি কি করবে এ নিয়ে তাদের নেতৃবৃন্দের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান বলেন, ‘বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তারা কি করবেন সে নিয়ে তারা বলতেই পারেন, এটি বলা কোন অপরাধ নয়। তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে না। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যারা মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করে, তাদের ডাকে তো মানুষ সাড়া দেয় নি ও দেবেও না। তারা তো ১০ ডিসেম্বরই সরকার পতন ঘটাতে চেয়েছিল, কিন্তু সরকার পতন ঘটাতে এসে তারা নিজেদের পতন ঘটিয়ে চলে গেছে।’