ঢাকা: ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা তাদের দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দিতে গেলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তাদের কথা না শুনে এড়িয়ে যাওয়ায় এর সমালোচনা করেছেন দেশের ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) গণ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সাবেক ছাত্রদল নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের ঢাকার শাহীনবাগের বাসায় যান। সে সময় তিনি বেরিয়ে আসার পর ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা তাদের দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দিতে গেলে পিটার হাস তাদের কথা না শুনে এড়িয়ে যান বলে দাবি করেন তারা।
পিটার হাসের এ আচরণকে বিশিষ্টজনরা কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বর্হিভূত আচরণ হিসেবে দেখছেন, যা কিনা ভিয়েনা কনভেনশনের ( ১৯৬১) পরিপন্থী। একই সাথে তার এ ধরনের আচরণ কূটনৈতিক দায়িত্বের পর্যায়ে ফেলা যায় কি-না, নাকি এর মধ্যদিয়ে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি জড়িয়ে পড়লেন ও বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষভুক্ত হলেন কি-না, এনিয়ে দেশের জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনাবিদ্রোহ দমনের নামে শত শত সেনা সদস্যকে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর থেকে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৪০০ জন সেনা সদস্যকে কারাগারের অভ্যন্তরে গণহারে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। সে হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে সেসব শহীদ পরিবারের সদস্যরা সংগঠিত হয়েছেন ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) পিটার হাস তাদের কাছ থেকে স্মারকলিপি নিলে, কেউ তাকে পক্ষপাতপূর্ণ আচরণের দায়ে অভিযুক্ত করতে পারতেন না।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ ধরনের শিষ্টাচারবর্হিভূত পক্ষপাতমূলক আচরণের তীব্র সমালোচনা করে এটাকে দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেন বিশিষ্ট এ নাগরিকরা।
বিবৃতিতে সই করেছেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী রনবী, অধ্যাপক হাশেম খান, শিক্ষাবিদ মিজানুর রহমান ও নাসরীন আহমাদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সহিদ আখতার হোসেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএ মামুন, অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা, কবি চৌধুরী জুলফিকার মতিন, নাট্যব্যক্তিত্ব মলয় কুমার ভৌমিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক ও অভিনেত্রী অরুনা বিশ্বাস।
বিবৃতিতে আরো সই করেছেন ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার এমডি আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএফউজের সভাপতি ওমর ফারুক, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, দৈনিক কালেরকণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, মঞ্চ সারথি আতাউর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ও অজয় দাশগুপ্ত।