শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

শিরোনাম

মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রণয়ন হচ্ছে নীতিমালা

বুধবার, জানুয়ারী ১৮, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: মহাসড়ক ও সিটির রাস্তায় গত কয়েক বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা দ্রুত বৃদ্ধির কারণে, সরকার দেশে মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে। খবর বিএসএসের।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার হাজার ৪৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় তিন হাজার ৮৯২ জন নিহত হয়েছে ও ২০২১ সালে সারা দেশে পাঁচ হাজার ৪৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৮৪ জন নিহত হয়েছে।
 
বিআরটিএর পরিচালক (নিরাপত্তা) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘বেপরোয়া মোটরসাইকেল চলাচলের কারণে গত কয়েক বছরে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০১০-২০১৮ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল তিন হাজারের নিচে। কিন্তু জাতীয় মহাসড়ক ও শহরের রাস্তায় মোটরবাইক চলাচল বৃদ্ধির কারণে ২০১৯ সালে সংখ্যাটি চার হাজারের ঘর পার করেছে। আমাদের কাছে মোটরবাইক দুর্ঘটনার আলাদা কোন পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু আমাদের তদন্ত অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘তাই বিআরটিএ মহাসড়কে মোটরবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।’

শেখ মোহাম্মদ আরো বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই এ লক্ষ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছি। আমরা এটি মন্ত্রণালয়ে (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) জমা দিয়েছি। মন্ত্রণালয় খসড়া নীতির বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করবে ও তারা এটি চুড়ান্ত করবে।’

তিনি বলেন, ‘নীতিমালায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর জোর দেয়া হবে।’

নিবিড়ভাবে মহাসড়ক মনিটরিং নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা এত নিবিড়ভাবে করতে পারি না, জনবলের অভাব রয়েছে। তা সত্বেও আমরা মনিটরিং করছি। কাজ চলছে।’

মাহবুব-ই-রব্বানী উল্লেখ করেন, এ উদ্যোগের আওতায় সরকার মোটরবাইক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবহার নিশ্চিত করবে ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেবে।

গত ৭ জানুয়ারী রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন (আরএসএফ) সড়ক দুর্ঘটনার উপর তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে উল্লেখ করেছে যে, দেশে ২০২২ সালে ছয় হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৭১৩ জন নিহত হয়েছে ও এসব দুর্ঘটনায় ১২ হাজার ৬১৫ জন আহত হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, ‘দুই হাজার ৯৭৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিন হাজার ৯১ জন মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৪০ দশমিক শুন্য সাত শতাংশ।

ফাউন্ডেশনটি নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ছাড়াও ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে এ চার বছরে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় একই।’

২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে মোট মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির কারণে মোট দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।
২০১৯ সালে সংঘটিত ১১৮৯টি মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মোট ৯৪৫ ব্যক্তি, ২০২০ সালে ১৩৮১টি দুর্ঘটনায় ১৪৬৩ ব্যক্তি, ২০২১ সালে ২০৭৮টি দুর্ঘটনায় ২২১৪ ব্যক্তি ও ২০২২ সালে ২৯৭৩টি দুর্ঘটনায় ৩০৯১ ব্যক্তি প্রাণ হারায়।

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মটর সাইকেল দুর্ঘটনা ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ ও হতাহতের ঘটনা ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে এ দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও হতাহতের ঘটনা বেড়েছে ৫১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এ দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩ দশমিক শুন্য সাত শতাংশ ও হতাহতের ঘটনা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।

২০২২ সালে সংঘটিত ২৯৭৩টি মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তিন হাজার ৯১ ব্যক্তি প্রাণ হারায় ও দুই হাজার ১৫৪ ব্যক্তি আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৭৬ দশমিক ৪১ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে।

অন্যন্য যানবাহনের সাথে মটর সাইকেলের সংঘর্ষের ঘটনা ছিল ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ, মটর সাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ, ভারী যাবাহন মটর সাইকেলকে আঘাত করা ও ধাক্কা দেয়ার ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও এক দশমিক ৬৫ শতাংশ ছিল অন্যান্য দুর্ঘটনা।

মটর সাইকেল দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা বৃদ্ধির বহু কারণ রয়েছে। অধিকাংশ মটর সাইকেল চালক বয়সে কিশোর কিংবা তরুণ কেবল এটাই সত্য নয়, তাদের মধ্যে জ্ঞানের অভাব ও ট্রাাফিক আইন না মানার প্রবণতাও রয়েছে। তরুণরা বেপরোয়া গতিতে মটর সাইকেল চালায় ফলে নিজেরা যেমন দুর্ঘটনায় পতিত হয় তেমনি অন্যরাও দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিরাট সংখ্যক মটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ট্রাক, কাভার ভ্যান, পিকআপ ও বাসের সাথে সংঘর্ষের ফলে। এ দ্রুতগামী যানবাহনগুলোর অধিকাংশ চালক অদক্ষ ও অসুস্থ। বেপরোয়াভাবে তাদের গাড়ি চালানোর ফলে- যারা সাবধানে মোটরসাইকেল চালান, তারাও দুর্ঘটনার শিকার হন।

চার চাকার যানবাহনের চেয়ে মোটরসাইকেল ৩০ গুণ বেশি বিপজ্জনক। কিন্তু দেশের দুর্বল (ফিটনেসবিহীন) গণপরিবহণগুলো সহজেই রাস্তায় নামতে পারে বিধায় ও যানজটের কারণে-মানুষ যানজট এড়াতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। আর এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই যাচ্ছে।

মাহবুব-এ-রব্বানী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সরকার ৩ ই (ইঞ্জিনিয়ারিং, এডুকেশন, এনফোর্সমেন্ট) এর মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ‘

তিনি আরো বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের মহাসড়কের পাশে চালকদের জন্য শৌচাগার নির্মাণ, সড়কের উভয় পাশে ধীর গতির যানবাহনগুলোর জন্য পৃথক লেন নির্মাণ, ট্রাফিক সিগনাল স্থাপন ও সড়কে বিভিন্ন নির্দেশনা চিহ্ন আঁকা, দুর্ঘটনা প্রবণ স্থানগুলোতে রাম্বল স্ট্রিপ স্থাপনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে।

মাহবুব-এ-রব্বানী আরো বলেন, ‘ পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী- নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পরও বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর গড়ে তিন হাজার ১৩৩ জন মারা গেছে।’

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে, কারো একক প্রচেষ্টায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এর জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।