মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়া ঘোষণা চীনের আবাসন কোম্পানি এভারগ্র্যান্ডের

রবিবার, আগস্ট ২০, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: চীনে আবাসন ব্যবসায় সংকটের মধ্যে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এভারগ্র্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) নিউইয়র্কের একটি আদালতে সুরক্ষার আবেদন করেছে এই চীনা কোম্পানি। খবর বিবিসির।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনে দেউলিয়া হওয়া থেকে সুরক্ষা পেলে ঋণে জর্জরিত এভারগ্র্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ রক্ষা করতে পারবে। দুর্দশা থেকে উদ্ধার পেতে আরো কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য ঋণদাতাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এভারগ্র্যান্ড।

চীনা এই রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ২০২১ সালে ঋণ খেলাপি হলে বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজারে তার ধাক্কা লাগে। তখন থেকেই ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আলোচনা চালিয়ে আসছে এভারগ্র্যান্ড।

এভারগ্র্যান্ডের ঋণের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আবাসন খাতে পৃথিবীতে আর কোন কোম্পানির এত বেশি ঋণ নেই।

এভারগ্র্যান্ড গেল জুলাইয়ে জানিয়েছে, গেল দুই বছরে সব মিলিয়ে ৮০ বিলিয়ন ডলার লোকসান হয়েছে তাদের।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২২ সালের মার্চ থেকে এ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত রাখা হয়েছে।

১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এভারগ্র্যান্ড চীনের ২৮০টি শহরে প্রায় এক হাজার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করেছে৷ দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়তে থাকায় এভারগ্র্যান্ডের মত কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়ও বাড়ছিল বেশ। এভাবে আবাসন ব্যবসায় চীনের প্রবৃদ্ধির অন্যতম বড় চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে৷ ২০২১ সালে দেশটির মোট আর্থিক লেনদেনের প্রায় ২৯ শতাংশ এই খাতেই হত।

ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা আর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকায় ফ্ল্যাট তৈরি করত এভারগ্র্যান্ডের মত কোম্পানিগুলো। কিন্তু, চীন ২০২০ সালে আবাসন খাতের ঋণের জন্য নতুন এক আইন করার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। ‘থ্রি রেড লাইনস’ নামের ওই আইনে প্রপার্টি ডেভেলপারদের ঋণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। ফলে, আগের মত চাইলেই ঋণ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আর তাতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে এভারগ্র্যান্ডের মত কোম্পানিগুলো, ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাওয়ায় তাদের বড় প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

চীনের আরেক বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কান্ট্রি গার্ডেন গেল সপ্তাহে জানিয়েছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে তাদের লোকসানের পরিমাণ সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

অর্থনীতির গবেষণা সংস্থা মুডি’স অ্যানালিটিকসের স্টিভেন কোচরান বলছেন, ‘এই সংকট থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হল, অসমাপ্ত আবাসন প্রকল্পগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করা। কারণ, তাতে অর্থের লেনদেন কিছুটা হলেও বজায় থাকবে।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এসব কোম্পানি ক্রেতার কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে সেই টাকায় ভবন নির্মাণ করে। এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেলে ক্রেতারা আর কিস্তি দিতে চায় না। সেটা ডেভেলপারদের ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করে।’

এই মাসের শুরুর দিকে খবর আসে, চীনের অর্থনীতি মূল্য সংকোচন বা ডিফ্লেশনের কবলে পড়েছে গেল জুলাই মাসে। অর্থাৎ, গেল বছর জুলাইয়ে পণ্য বা সেবার যে দাম ছিল, এ বছর জুলাইয়ে তার চেয়েও কমে গেছে। বাজারে চাহিদা বা ভোগব্যয় কমে গেলে মূল্য সংকোচনের মত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তার সরাসরি প্রভাব পড়ে উৎপাদনে। উৎপাদন কমে গেলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি কমে আসে।

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন বিশ্বে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় উৎপাদক। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতিও ভাল যাচ্ছে না।

চীনের সরকারি তথ্য বলছে, ‘গেল জুলাইয়ে চীনের রপ্তানি কমেছে এক বছর আগের সময়ের তুলনায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। আর আমদানি কমেছে ১২ দশমিক চার শতাংশ।